১৬ই আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১লা ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২২শে সফর, ১৪৪৭ হিজরি

শেখ মুজিব জাতির পিতা নন, স্বাধীনতায় তার ত্যাগ স্বীকার করি: নাহিদ ইসলাম

নিজস্ব প্রতিনিধি:

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম স্বাধীনতা সংগ্রামে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান স্বীকার করলেও তাকে ‘জাতির পিতা’ হিসেবে অভিহিত করতে রাজি নন বলে জানিয়েছেন। শুক্রবার (১৫ আগস্ট) তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে প্রকাশিত এক পোস্টে তিনি এ মতামত ব্যক্ত করেন।

নাহিদ ইসলাম তার পোস্টে লিখেছেন, ‘শেখ মুজিবুর রহমান জাতির পিতা নন। স্বাধীনতা অর্জনে তার ভূমিকা ও ত্যাগ স্বীকার আমরা স্বীকার করি, কিন্তু তার শাসনামলে সংঘটিত জাতীয় বিপর্যয়ও আমরা স্মরণ করি। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ ভারতের করদ রাষ্ট্রে পরিণত হয়, জনগণ-বিরোধী ১৯৭২ সালের সংবিধান চাপিয়ে দেওয়া হয় এবং শুরু হয় লুটপাট, রাজনৈতিক হত্যা ও একদলীয় বাকশাল স্বৈরশাসনের ভিত্তি রচনা।’

নাহিদ ফেসবুক পোস্টে উল্লেখ করেন লেখেন, ‘আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে মুজিব পূজা ও মুক্তিযুদ্ধ পূজা—এ এক রাজনৈতিক মূর্তিপূজা, যা জনগণকে দমন, দেশ লুট এবং নাগরিকদের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে বিভক্ত করার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। এটি ছিল গণতন্ত্রের মুখোশে আধুনিক জমিদারি। অথচ মুক্তিযুদ্ধ ছিল সমগ্র জনগণের সংগ্রাম। দশকের পর দশক ধরে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশকে নিজের বংশগত সম্পত্তি মনে করে শাসন করেছে, জবাবদিহিতাহীনভাবে ক্ষমতা ভোগ করেছে এবং মুজিবের নাম ব্যবহার করে প্রতিটি দুর্নীতি ও দমনকে ন্যায্যতা দিয়েছে।’

এই নেতা লেখেন, ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান এই জমিদারি ভেঙে দিয়েছে। আর কখনো কোনো ব্যক্তি, পরিবার বা মতবাদ জনগণের অধিকার কেড়ে নিতে পারবে না বা বাংলাদেশের ওপর ফ্যাসিবাদ চাপিয়ে দিতে পারবে না। ‌‘জাতির পিতা’ উপাধি কোনো ঐতিহাসিক সত্য নয়। এটি আওয়ামী লীগের তৈরি এক ফ্যাসিবাদী হাতিয়ার, যা ভিন্নমত দমন ও রাষ্ট্রের একচেটিয়া মালিকানা প্রতিষ্ঠার জন্য ব্যবহৃত হয়েছে। বাংলাদেশ সমানভাবে সব নাগরিকের, এর জন্ম বা ভবিষ্যতের মালিকানা কোনো ব্যক্তির হতে পারে না।

ফেসবুক পোস্টে নাহিদ ইসলাম লেখেন, ‘মুজিববাদ হচ্ছে শেখ মুজিব ও মুক্তিযুদ্ধের নামে পরিচালিত এক ফ্যাসিবাদী মতবাদ। আমাদের সংগ্রাম কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে নয়, বরং এই ফ্যাসিবাদী মতবাদের বিরুদ্ধে। মুজিববাদ হচ্ছে ফ্যাসিবাদ ও বিভেদের মতবাদ। এর মানে গুম, হত্যা, ধর্ষণ ও পদ্ধতিগত মানবাধিকার লঙ্ঘন। এর মানে জাতীয় সম্পদ লুট ও বিদেশে পাচার। এর মানে ইসলামভীতি, সাম্প্রদায়িকতা ও সংখ্যালঘু ভূমি দখল। এর মানে জাতীয় সার্বভৌমত্ব বিদেশি শক্তির কাছে বিক্রি করা। ষোলো বছর ধরে মুজিবকে রাজনৈতিকভাবে জীবিত রাখা হয়েছে এক অস্ত্র হিসেবে, আর তার মূর্তির আড়ালে চলেছে অপহরণ, খুন, লুটপাট ও গণহত্যা।’

তিনি লেখেন, ‘মুজিববাদ আজও এক জীবন্ত বিপদ। একে পরাজিত করতে হবে রাজনৈতিক, আদর্শিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিরোধের মাধ্যমে। আমাদের সংগ্রাম একটি প্রজাতন্ত্র গড়ার, একটি স্বাধীন, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার। যেখানে কোনো দল, বংশ বা নেতা জনগণের ঊর্ধ্বে নয়। বাংলাদেশ কারো ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়, এটি জনগণের প্রজাতন্ত্র।’

এনসিপি নেতার এই মন্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলা বিতর্কে নতুন মাত্রা যোগ করল এ ধরনের বক্তব্য।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের সংবিধানের প্রস্তাবনায় শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘জাতির পিতা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে এবং এ বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য রয়েছে বলে সরকারি দলগুলো দাবি করে আসছে। তবে বিরোধী কিছু রাজনৈতিক মহল এ উপাধি নিয়ে ইতিহাস পুনর্লিখনের দাবি জানিয়ে আসছিল।

ফেসবুকে আমরা

মন্তব্য করুন

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সর্বাাধিক পঠিত নিউজ

Scroll to Top