১৭ই আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২রা ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৩শে সফর, ১৪৪৭ হিজরি

পিলখানা হত্যাকাণ্ডের সত্যতা জানার অপরাধে মেজর জাহিদ হত্যা: পরিবারের মর্মস্পর্শী বয়ান

নিজস্ব প্রতিনিধি:

সাবেক মেজর জাহিদুল ইসলামের স্ত্রী জেবুন্নাহার ইসলাম ও পরিবারের সদস্যদের দেওয়া তথ্যমতে, ২০০৯ সালের পিলখানা হত্যাকাণ্ডে ভারতের সম্পৃক্ততার তথ্য জানার অপরাধে তাকে টার্গেট করে হত্যা করা হয়। ২০১৬ সালের ২ সেপ্টেম্বর রাত ১১টায় মিরপুর রূপনগরের বাসা থেকে তাকে জঙ্গি নাটক সাজিয়ে গ্রেফতার করে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানেই তাকে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ করেছেন পরিবার।

জাহিদুল ইসলামের বিধবা স্ত্রী জেবুন্নাহার ইসলাম বলেন, “আমার স্বামীকে জঙ্গি তকমা দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আমাকে ও আমার দুই মেয়েকে ৪ মাস ৭ দিন গুম করে রাখা হয়েছিল। আমার কাছ থেকে জোর করে স্বীকারোক্তি নেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল যে আমার স্বামী জঙ্গি ছিলেন।”

ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনায় জানা যায়, হত্যার রাতেই জেবুন্নাহার ও তার দুই কন্যাকে চোখ বেঁধে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। পরদিন তাকে জিজ্ঞাসাবাদের নামে নির্যাতন করা হয় এবং স্বামীর মৃত্যুর কথা জানানো হয়। জাহিদের বড় মেয়েকেও পরবর্তীতে গ্রেফতার করে আজিমপুরের একটি বাসা থেকে জঙ্গি হিসেবে উদ্ধারের নাটক মঞ্চস্থ করা হয়।

জাহিদের ভাই জাহিদুল হক মজুমদার বলেন, “লাশ ঢাকা মেডিকেলে আড়াই বছর অবহেলায় পড়ে ছিল। শেষমেশ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করতে দেওয়া হয়।”

জাহিদুল ইসলাম ২০০০ সালে সেনাবাহিনীতে কমিশনপ্রাপ্ত মেধাবী অফিসার ছিলেন। তিনি ড. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ গোল্ড মেডেলজয়ী এবং কঙ্গো শান্তিরক্ষা মিশনসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক দায়িত্ব পালন করেছেন। পরিবারের দাবি, পিলখানা হত্যাকাণ্ডের সত্যতা জানার কারণেই তাকে টার্গেট করা হয়।

২০২৪ সালের ২৭ জুলাই জেবুন্নাহার ইসলাম গুম কমিশন এবং ১০ আগস্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পৃথক দুটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগে সাবেক আইজিপি একেএম শহিদুল হক, ডিবি’র তৎকালীন প্রধান মো. মনিরুল ইসলামসহ ৭ জনকে আসামি করা হয়েছে।

ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন সূত্রে জানা গেছে, অভিযোগটি তদন্তাধীন রয়েছে। জাহিদের পরিবারের আইনজীবী ব্যারিস্টার এম সারোয়ার হোসেন বলেন, “এটি দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে নৃশংস হত্যাকাণ্ডগুলোর একটি।”

উল্লেখ্য, জাহিদুল ইসলাম ২০১৫ সালে সেনাবাহিনী থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নেন। পরিবারের দাবি, সেনাবাহিনীতে অযোগ্য ব্যক্তিদের পদোন্নতির প্রতিবাদ এবং পিলখানা হত্যাকাণ্ডের সত্যতা জানার কারণেই তাকে হত্যা করা হয়েছে।

ফেসবুকে আমরা

মন্তব্য করুন

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সর্বাাধিক পঠিত নিউজ

Scroll to Top