নিজস্ব প্রতিনিধি:
জেন–জি প্রজন্মের গণআন্দোলনের পর নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির পদত্যাগের মধ্য দিয়ে দেশটিতে নতুন রাজনৈতিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্রপতি রামচন্দ্র পাওডেল অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের বিষয়ে গুরুতর আলোচনায় নেমেছেন।
প্রথম প্রস্তাব এসেছে জেন–জি প্রজন্মের পক্ষ থেকে। তারা সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশিলা কার্কিকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে প্রস্তাব করেছেন। কাঠমান্ডুর মেয়র বালেন শাহও এ প্রস্তাবের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। নেপালের শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যম সেতুপাটি জানায়, রাষ্ট্রপতি সংবিধানের সীমার মধ্যে থেকে সম্ভাব্য সমাধান খুঁজছেন এবং এ বিষয়ে সংবিধান বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ নিয়েছেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে শীতল নিবাসে পাঁচজন খ্যাতনামা সংবিধানবিদ—পূর্ণমান শাক্য, ভিমার্জুন আচার্য, বিপিন অধিকারী, চন্দ্রকান্ত জ্যোয়ালি এবং ললিত বস্নেত—রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠক করেন।
সংবিধানবিদ ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী চন্দ্রকান্ত জ্যোয়ালি জানান, রাষ্ট্রপতির প্রধান প্রশ্ন ছিল—যখন জোট সরকার পদত্যাগ করেছে, সেই বৈপরীত্যপূর্ণ পরিস্থিতিতে সংবিধান অনুযায়ী অন্তর্বর্তী সরকার গঠন সম্ভব কি না বা অন্য কোনো বিকল্প পথ আছে কি না। আলোচনায় তিনটি সম্ভাব্য পথ তুলে ধরা হয়। একটি পথ অনুযায়ী সংবিধানের ধারা ৭৬ এবং ৭৮ ব্যবহার করে বড় দল নেপালি কংগ্রেসকে সরকার গঠনের সুযোগ দেওয়া যেতে পারে। তবে জেন–জি প্রজন্মের প্রতিনিধিরা এই প্রস্তাব নাও মেনে নিতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে সংসদের অন্য কোনো সদস্যকে প্রধানমন্ত্রী করে ধারা ৭৮ অনুযায়ী জেন–জি প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করে সরকার গঠন করা সম্ভব। দ্বিতীয় পথ হলো সংসদ অধিবেশন আহ্বান করে সব দলের অংশগ্রহণে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন, সংসদে প্রস্তাব পাশ করে নির্বাচন ও সংবিধান সংশোধনের রোডম্যাপ ঠিক করা। তৃতীয় পথ অনুযায়ী কাজ চালু প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতির কাছে জেন–জি প্রস্তাব বাস্তবায়নের সুপারিশ করবেন এবং রাষ্ট্রপতি ধারা ৬৬ অনুযায়ী সরকার গঠনের অনুমোদন দেবেন।
রাষ্ট্রপতি পাওডেল সংবিধানের রক্ষক হিসেবে বিশেষ পরিস্থিতিতে ‘ডকট্রিন অফ ইক্লিপ্স’ প্রয়োগ করে সাবেক প্রধান বিচারপতিকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। আলোচনায় সিদ্ধান্তে পৌঁছানো হয়েছে যে সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশিলা কার্কি হবেন নেপালের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী। তিনি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত, পরিপক্ব এবং অভিজ্ঞ নেতা হিসেবে দেশের রাজনৈতিক সংকট মোকাবিলায় নেতৃত্ব দিতে সক্ষম।
রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণ এবং রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হলে সংসদ ভেঙে ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বিশ্লেষকদের মতে, নেপালের রাজনৈতিক ইতিহাসে এটি এক গুরুত্বপূর্ণ মোড়, যা দেশকে চলমান সংকট থেকে উত্তরণের নতুন পথে এগিয়ে নেবে।