১৪ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩০শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২২শে রবিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

উজিরপুরের মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ বোর্ডে অংশগ্রহণ না করেও স্বাক্ষর করেন- মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ

মাহফুজুর রহমান, উজিরপুর (বরিশাল) প্রতিবেদকঃ
“মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ বোর্ডে অংশগ্রহণ না করেও স্বাক্ষর “। ভুক্তভোগী প্রার্থীর মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।

বরিশাল জেলার উজিরপুরে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এবিএম জাহিদ হাসানের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণসহ সীমাহীন দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।

ভেঙে পড়েছে উজিরপুরের স্কুল কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষা ব্যবস্থার শৃঙ্খলা।

কোন শিক্ষক ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এ কর্মকর্তার দপ্তরে অভিযোগ করলে অথবা তদন্তভার পেলে প্রথমে তিনি উভয় পক্ষকে ডেকে আবেদনকারীকে ভুল বুঝিয়ে পাঠিয়ে দিয়ে অভিযুক্ত কে ডেকে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে আপষ-মীমাংসা করে থাকেন।
বিষয়টি প্রত্যেকটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক, সহকারী শিক্ষক ও কর্মচারীরা জানেন বিদায় এক এর পর এক অপকর্ম করে রেহাই পেয়ে যাচ্ছে দুর্নীতিবাজ শিক্ষক ও কর্মচারী।

এই শিক্ষা কর্মকর্তার উদাসীনতার ফলে প্রত্যেকটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে বলে স্থানীয়দের দাবি।

সম্প্রতি এই শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে উপজেলার সাতলা ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের চাকরিপ্রার্থী মোহাম্মদ অলিউল ইসলামের মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের, মহাপরিচালক এর কাছে লিখিত অভিযোগের পর থেকেই একের পর এক মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার দুর্নীতি ও ঘুষের কাহিনী বেরিয়ে আসতে শুরু করে। সাতলা ইউনিয়নের রাজাপুর নেছারিয়া দাখিল মাদ্রাসার এবতেদায়ী প্রধান শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযোগ থেকে বেরিয়ে আসে, তিনি শিক্ষা অধিদপ্তরের ডিজির প্রতিনিধি হয়ে নিয়োগ বোর্ডে অংশগ্রহণ না করে শুধুমাত্র টাকার বিনিময়ে নিয়োগ বোর্ডের কাগজে অনুমোদন দিয়ে দেন। সম্প্রতি তিনি এনটি আর সির নতুন শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র এমপিও ভুক্ত করার জন্য প্রত্যেক প্রার্থীর কাছ থেকে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা করে আদায় করে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এ বিষয়ে নাম না প্রকাশকরা শর্তে একাধিক শিক্ষক বলেন “স্যার ঘুষ নেয়না তবে জিম্মি করে মোটা অংকের সম্মানী নিচ্ছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন এনটিআরসির সুপারিশ প্রাপ্ত শিক্ষকরা জানান, পরীক্ষায় আবেদন থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত আমাদের কোন দপ্তরে এক টাকাও দিতে হয়নি। কিন্তু সরকারের নিয়মকানুনের বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এবিএম জাহিদ হাসানকে আমাদেরকে পাঁচ থেকে দশ হাজার টাকা করে ঘুষ দিতে হচ্ছে। মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ের প্রতিটি চেয়ার টেবিলই দুর্নীতিগ্রস্থ। অফিসের স্টাফরা কাজ করার জন্য কন্টাক করেন স্যারের ইশারায়।”

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সরকারি চাকরিবিধি অনুযায়ী একটানা এক জায়গায় তিন বছরের বেশি থাকার সুযোগ না থাকলেও তিনি আছেন অনেক বছর ধরে। অনিয়ম-দুর্নীতির নিরাপদ ক্ষেত্র তৈরি করায় তিনি এই উপজেলা ছাড়ছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। তাঁর বিরুদ্ধে শিক্ষকেরা একাধিকবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগও করেন। তবে অদৃশ্য কারণে বহাল তবিয়তে আছেন এই শিক্ষা কর্মকর্তা।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আলী সুজা জানান, বিষয়টি শুনেছি তদন্ত কার্যক্রম চলছে, তথ্য প্রমান পেলে তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে প্রতিবেদন পাঠানো হবে তারাই ব্যবস্থা নিবেন । অপরদিকে রাজাপুর নেছারিয়া দাখিল মাদ্রাসার অভিভাবক সদস্য মোহাম্মদ জামাল হোসেন প্রতিবেদক কে জানান, নিয়োগ সংক্রান্ত ব্যাপারে মাদ্রাসার পক্ষ থেকে কোন অর্থ নেওয়া হয়নি তবে শিক্ষা কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন কর্মকর্তাদের পিছনে যে সকল খরচ করা হয়েছে তা প্রার্থী বহন করবে, সে বাবদ মাদ্রাসার সুপার, সভাপতি সহ বিদ্যুৎসাহী সদস্য সামান্য কিছু টাকা নিয়েছেন। অপরদিকে মাদ্রাসা সুপার মাওলানা আব্দুল কাদেরকে ফোন দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। বিদ্যুৎসাহী সদস্য মোঃ ইয়াসিন বেপারীকে কয়েকবার ফোন দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এই শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ২০২২ সালের ২৬ ডিসেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে দুর্নীতির অভিযোগের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছিল কিন্তু অজ্ঞাত কারণে মন্ত্রণালয় কোন ব্যবস্থা নেননি।

ফেসবুকে আমরা

মন্তব্য করুন

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সর্বাাধিক পঠিত নিউজ

Scroll to Top