মোঃ আমিরুল হক, রাজবাড়ী প্রতিনিধি:
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলায় নুরুল হক ওরফে নুরাল পাগলের দরবারে হামলা, ভাংচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও রাসেল মোল্যা হত্যা মামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় মোঃ রাসেল মন্ডল (২০) নামে একজন ড্রাইভারকে গ্রেপ্তার করেছে। সে গোয়ালন্দ উপজেলার খদিরাম সরকার পাড়া প্রৌড় ৫ নং ওয়ার্ড গ্রামের আঃ সামাদ মন্ডলের ছেলে।
রবিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা পৌনে ৭টার সময় গোয়ালন্দ বাস স্ট্যান্ড এলাকা থেকে রাজবাড়ী জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পুলিশের একটি টিম তাকে গ্রেপ্তার করে।
সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস্) মোঃ শরীফ আল রাজীব বলেন, নুরাল পাগলের দরবার থেকে চুরি, লুটপাট, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, মারামারি মামলায় মরদেহ পোড়ানোর ফুটেজ সনাক্তকৃত রাসেল মন্ডলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ পর্যন্ত পুলিশের উপর হামলা মামলায় ১৬জন ও দরবারে হামলা, ভাংচুর, লুটপাটের মামলায় ১১ জনসহ মোট ২৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। ৮জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
জানা গেছে, নুরাল পাগলের ভক্ত নিহত রাসেল মোল্লাকে হত্যা, অগ্নিসংযোগ, লাশ পোড়ানো, ক্ষতিসাধন, চুরি, জখমের অভিযোগে নিহতের বাবা আমজাদ মোল্লা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ৩৫০০-৪০০০ জনকে আসামী করে গত সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) রাতে গোয়ালন্দ থানায় মামলা দায়ের করেন। এর আগে গত শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) রাতে গোয়ালন্দ ঘাট থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সেলিম মোল্লা বাদী হয়ে পুলিশের উপর হামলা, ভাংচুরের অভিযোগে অজ্ঞাতনামা সাড়ে তিন হাজার জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
উল্লেখ্য, শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) জুমার নামাজের পর বিক্ষোভ সমাবেশ করে ইমান আক্বিদা রক্ষা কমিটি। বিক্ষোভ থেকে হামলা চালানো হয় নুরাল পাগলার দরবার শরীফে। পাল্টা আক্রমণ করেন নুরাল পাগলের ভক্তরা। সংঘর্ষে রাসেল মোল্যা নামে নুরাল পাগলের ভক্ত নিহত ও শতাধিক মানুষ আহত হন। পরে নুরাল পাগলের দরবার শরীফে ঢুকে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলে হামলা চালানো হয় পুলিশের ওপর, ভাঙচুর করা হয় পুলিশের গাড়ি।
গত ২৩ আগস্ট মারা যান নুরুল হক ওরফে নুরাল পাগলা। এরপর তার ভক্তরা দরবারের ভেতরে তাকে কবর দেন এবং কবরের উপরের ১০-১২ উঁচু একটি স্থাপনা নির্মাণ করা হয় যা সৌদি আরবের মক্কায় অবস্থিত মুসলমানদের কেবলা কাবা শরীফে মতো দেখতে। তাই এ নিয়ে আপত্তি জানাচ্ছিলেন স্থানীয় ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ।
এ নিয়ে বেশ কয়েকদিন ধরে সেখানে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। পরে শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) জুমার নামাজের পর ইমান আক্বিদা রক্ষা কমিটির ব্যানারে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। পরে তারা দরবারে হামলা চালান এবং দরবারের ভেতরে থাকা নুরাল পাগলের কবর ভেঙে দেন। সেই সঙ্গে কবর থেকে মরদেহ উত্তোলন করে তা পুড়িয়েও দেন।