আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ২০ দফা পরিকল্পনার প্রতি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি একে ‘সুড়ঙ্গ শেষে আলোর রেখা’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে ইঙ্গিত দিয়েছেন, নির্দিষ্ট শর্তসাপেক্ষে রাশিয়া এ পরিকল্পনাকে সমর্থন করতে পারে।
বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) স্থানীয় সময় ভ্যালদাই ডিসকাশন ক্লাবে বক্তব্য রাখতে গিয়ে পুতিন বলেন, গাজার যুদ্ধ মানব ইতিহাসের আধুনিক কালের অন্যতম ভয়াবহ ঘটনা। তিনি জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের বক্তব্য উদ্ধৃত করে বলেন, গাজা এখন বিশ্বের বৃহত্তম ‘শিশুদের কবরস্থানে’ পরিণত হয়েছে।
পুতিন বলেন, “আমরা এখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের উদ্যোগগুলোর সঙ্গে আরও পরিচিত হচ্ছি। আমার মনে হচ্ছে হয়তো সুড়ঙ্গের শেষে কিছুটা আলোর রেখা দেখা দিতে পারে।” তিনি আরও যোগ করেন, পাশ্চাত্যের প্রচলিত একতরফা কূটনীতি, যা গাজায় বসবাসরত জনগণের ইতিহাস, ঐতিহ্য, পরিচয় ও সংস্কৃতিকে উপেক্ষা করে, তা কখনোই স্থায়ী শান্তি আনতে সক্ষম হবে না।
রুশ প্রেসিডেন্ট জানান, রাশিয়া ঐতিহাসিকভাবেই দুই-রাষ্ট্র সমাধানকে সমর্থন করে আসছে—১৯৪৮ এবং ১৯৭৪ সালের জাতিসংঘ প্রস্তাবনার সময় থেকেই। তার মতে, ট্রাম্পের পরিকল্পনা যদি সেই চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক হয়, তবে এটি সমর্থনের যোগ্য হতে পারে। তবে তিনি স্বীকার করেন, এখনও পুরো প্রস্তাবটি তিনি বিস্তারিতভাবে পর্যালোচনা করেননি।
প্রস্তাব অনুযায়ী, গাজায় একটি আন্তর্জাতিক শাসন কাঠামো গঠনের কথা বলা হয়েছে, যেখানে নেতৃত্বে থাকতে পারেন যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার। পুতিন তাকে অভিজ্ঞ এবং ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে সক্ষম ব্যক্তি হিসেবে বর্ণনা করেন। তবে তিনি প্রশ্ন তোলেন, এই আন্তর্জাতিক প্রশাসনের মেয়াদ কতদিন হবে, কীভাবে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা কীভাবে পরিচালিত হবে।
তার ভাষায়, “আমার মতে, সবকিছু প্রেসিডেন্ট আব্বাস এবং বর্তমান ফিলিস্তিনি প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করা উচিত। নিরাপত্তা বজায় রাখতে স্থানীয় মিলিশিয়া বাহিনীকে অন্তর্ভুক্ত করে একটি অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা গড়ে তোলা যেতে পারে।”
পুতিন ট্রাম্পের পরিকল্পনার সেসব দফারও সমর্থন জানান, যেখানে গাজায় আটক সব জিম্মিকে মুক্তি এবং ইসরাইলি কারাগারে থাকা ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তির বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, কতজন বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হবে এবং কখন তা করা হবে—এসব বিষয় স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করা জরুরি। একইসঙ্গে ফিলিস্তিনি জনগণ, আঞ্চলিক দেশসমূহ এবং হামাসের মতামত যেকোনো চুক্তিতে প্রতিফলিত হওয়া প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, ইসরাইলের অবস্থান এখনও পরিষ্কার নয় এবং সেটিই মূলত নির্ধারণ করবে ট্রাম্পের এই পরিকল্পনা সফল হতে পারবে কি না।