৯ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৪শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১৭ই রবিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

গাজাগামী জাহাজবহর থেকে শহিদুল আলমসহ আটক অধিকারকর্মীদের ইসরাইলে নেওয়া হয়েছে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

ইসরাইলের আশদোদ বন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে গাজাগামী জাহাজবহর থেকে আটক বাংলাদেশি আলোকচিত্রি ও মানবাধিকার কর্মী শহিদুল আলমসহ অন্যান্য অধিকারকর্মীদের। বুধবার (৮ অক্টোবর) রাতে ইসরাইলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বিষয়টি নিশ্চিত করে।

বিবৃতিতে বলা হয়, গাজা উপকূলে পৌঁছানোর আগেই আন্তর্জাতিক জলসীমায় ফ্লোটিলার নয়টি জাহাজ আটক করে ইসরাইলি নৌবাহিনী। এ সময় দেড়শরও বেশি স্বেচ্ছাসেবককে আটক করা হয়। ইসরাইলের দাবি, বর্তমানে তারা সবাই সুস্থ আছেন এবং দ্রুত নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে।

‘কনশানস’ নামের একটি জাহাজে ছিলেন শহিদুল আলম। বর্তমানে তিনি অন্যান্য মানবাধিকার কর্মীদের সঙ্গে ইসরাইলে আটক অবস্থায় রয়েছেন।

ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন (এফএফসি) আয়োজিত নয়টি জাহাজের বহরটি দুই সপ্তাহ আগে ইতালি থেকে যাত্রা শুরু করেছিল। একটি বড় জাহাজে প্রায় ১০০ জন এবং বাকি আটটি ছোট নৌযানে আরও ৫০ কর্মী ছিলেন। আয়োজকদের দাবি, এই নৌবহরে অন্তত দুজন ইসরাইলি নাগরিকও অংশ নিয়েছিলেন।

বুধবার ভোরে গাজা উপকূল থেকে প্রায় ১৫০ নটিক্যাল মাইল দূরে ভূমধ্যসাগরে ইসরাইলি নৌবাহিনীর বিশেষ ইউনিট শায়েতেত ১৩ ও অন্যান্য বাহিনী দ্রুত অভিযান চালিয়ে জাহাজগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেয়। কমান্ডোরা হেলিকপ্টার থেকে রশি বেয়ে ‘কনশানস’ নামের ৬৮ মিটার দীর্ঘ জাহাজে নামেন।

ফ্লোটিলা সংগঠকরা অভিযোগ করেছেন, তাদের জাহাজে ইসরাইলি সামরিক হেলিকপ্টার থেকে হামলা চালানো হয়েছে এবং আটটি নৌযান অবৈধভাবে আটক ও ছিনতাই করা হয়েছে।

এফএফসি জানায়, বিশ্বজুড়ে মানবাধিকারকর্মী, সাংবাদিক ও চিকিৎসকদের আটক করে অজানা স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাদের দাবি, নৌবহরটি গাজার হাসপাতালগুলোর জন্য ১ লাখ ১০ হাজার ডলারের বেশি মূল্যের ওষুধ, রেসপিরেটরি সরঞ্জাম ও পুষ্টি সহায়তা বহন করছিল।

ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে তুরস্ক। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একে সমুদ্র ডাকাতি ও আন্তর্জাতিক আইনের ভয়াবহ লঙ্ঘন হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।

তুরস্ক জানিয়েছে, নৌবহরে তুর্কি নাগরিক ও সংসদ সদস্যরাও ছিলেন। তারা অভিযোগ করেছেন, ইসরাইল শান্তিপূর্ণ উদ্যোগগুলোকেও আক্রমণ করছে এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ধ্বংস করছে।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেসেপ তাইয়েপ এরদোগান বলেছেন, গত দুই বছরে ইসরাইল হিটলারের চেয়েও ভয়াবহ গণহত্যা চালিয়েছে।

এর আগের সপ্তাহে গাজামুখী ৪০টিরও বেশি নৌকা আটক করে ইসরাইল, যেখানে ৪৫০ জনেরও বেশি কর্মী ছিলেন।

ইসরাইল পূর্বেও গাজাগামী জাহাজে হামলা চালিয়েছে, ত্রাণ সামগ্রী জব্দ করেছে এবং কর্মীদের আটক করে পরে বহিষ্কার করেছে। প্রায় ২৪ লাখ মানুষের বসবাসের গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের অবরোধ চলছে টানা ১৮ বছর ধরে।

২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরাইলি হামলায় গাজায় ৬৭ হাজার ১০০-এরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। অব্যাহত বোমাবর্ষণে গাজা এখন প্রায় সম্পূর্ণভাবে বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।

ফেসবুকে আমরা

মন্তব্য করুন

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সর্বাাধিক পঠিত নিউজ

Scroll to Top