২০শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৪ঠা কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৮শে রবিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

বগুড়ায় এনসিপির সমন্বয় সভায় ককটেল বিস্ফোরণ, ফ্যাসিস্টদের দায়ী করলেন সারজিস আলম

নিজস্ব প্রতিনিধি:

বগুড়ায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলমের উপস্থিতিতে সমন্বয় সভা চলাকালে জেলা পরিষদ মিলনায়তন চত্বরে একাধিক ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। সোমবার বিকেলে শহরের জেলা পরিষদ মিলনায়তন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

ঘটনার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সারজিস আলম এ হামলার জন্য ফ্যাসিস্টদের দায়ী করেন এবং সরকারের কাছে ফ্যাসিস্ট ও তাদের দোসরদের আস্ফালন বন্ধের দাবি জানান।

বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) আতোয়ার রহমান জানান, এনসিপির সভাস্থলের বাইরে ককটেলসদৃশ বস্তু বিস্ফোরণ হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করে গ্রেফতারের জন্য অভিযান চলছে।

জেলা এনসিপির সংগঠক সিরাজুল ইসলাম সিরাজ জানান, মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম জয়পুরহাটের সমন্বয় সভা শেষে বিকেল ৩টার দিকে বগুড়ায় আসেন। তিনি শহরের আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠসংলগ্ন এলাকায় এনসিপির জেলা কার্যালয় উদ্বোধন করেন। পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে সারজিস আলম বলেন, বিএনপি অতীতে যখন সরকার গঠন করেছে, তা সবসময় জোট সরকার ছিল। আগামী দিনে আওয়ামী লীগ বা বিএনপি কেউই এককভাবে দেশ পরিচালনা করতে পারবে না। এই পরিস্থিতিতে এনসিপির শক্তিশালী সাংগঠনিক উপস্থিতি রাজপথের পাশাপাশি সংসদেও প্রয়োজন।

তিনি আরও বলেন, আগামী জাতীয় সংসদে তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে। জুলাই সনদের বাস্তবায়ন ও খুনিদের বিচারের দাবিতে যারা কাজ করছে, এনসিপি তাদের সঙ্গে থাকবে। জনগণের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করাই দলের মূল লক্ষ্য। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, এনসিপি কোনো স্রোতে গা ভাসায়নি; বরং সনদের আইনগত ভিত্তি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত স্বাক্ষর দেবে না।

এরপর তিনি জেলা পরিষদ মিলনায়তনে সমন্বয় সভায় যোগ দেন। সভা শুরু হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই করতোয়া নদীর পাশ থেকে দুটি ককটেল নিক্ষেপ করা হয়। এর মধ্যে একটি অবিস্ফোরিত থাকলেও অন্যটি বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ও সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট ঘটনাস্থলে এসে তদন্ত শুরু করে এবং অবিস্ফোরিত ককটেলটি উদ্ধার করে।

বিস্ফোরণের পর এনসিপির নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। তারা বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন। এসময় বক্তারা বলেন, ককটেল হামলা বা মামলা দিয়ে এনসিপির অগ্রযাত্রা থামানো যাবে না। প্রশাসনের গাফিলতির কারণে ফ্যাসিস্টদের দোসররা এ হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেন তারা।

সভায় উপস্থিত ছিলেন এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সার্বিক মাহদী ও রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক ইমরান ইমন।

প্রতিবাদ সমাবেশে সারজিস আলম বলেন, এই হামলা ফ্যাসিস্ট ও তাদের দোসরদের চক্রান্তের অংশ। তারা আগামী জাতীয় নির্বাচনকে অস্থিতিশীল করতে চায়। তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে এ ধরনের আস্ফালন বন্ধের আহ্বান জানান।

তিনি প্রশাসনের উদ্দেশে বলেন, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার কেউ যেন কোনো দলের পক্ষ না নেয়। অতীতে প্রশাসনের ভুলের কারণে তাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। এখন যদি তারা ফ্যাসিস্টদের সহায়তা করে, ভবিষ্যতে জনগণই তাদের বিচারের মুখোমুখি করবে।

সারজিস আলম আরও বলেন, দেশের বর্তমান নিরাপত্তা পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। অন্তর্বর্তী সরকার ও প্রশাসনকে এখনই সতর্ক হতে হবে। যারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তাদের মুখোশ উন্মোচন করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।

বগুড়া সদর থানার ওসি হাসান বাসির জানান, জেলা পরিষদ চত্বরে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় পুলিশের একাধিক দল তদন্ত করছে। যারা জড়িত, তাদের শনাক্ত করে দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে। কোনোভাবেই কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

ফেসবুকে আমরা

মন্তব্য করুন

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সর্বাাধিক পঠিত নিউজ

Scroll to Top