মো. সাইফুল ইসলাম, নীলফামারী প্রতিনিধি:
বেতন-বোনাসসহ বিভিন্ন দাবি আদায়ের আন্দোলনের জেরে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে নীলফামারীর উত্তরা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড)। রোববার (২৬ অক্টোবর) বিকেলে কর্তৃপক্ষ হঠাৎ করে চারটি শিল্প প্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করলে শ্রমিকদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও হতাশা দেখা দেয়।
বন্ধ ঘোষিত প্রতিষ্ঠানগুলো হলো— দেশবন্ধু টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড, ইপিএফ প্রিন্ট লিমিটেড, মেইগো বাংলাদেশ লিমিটেড এবং সেকশন সেভেন ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড।
সোমবার (২৭ অক্টোবর) সকালে কয়েক হাজার শ্রমিক ইপিজেডের প্রধান ফটকের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। তারা বকেয়া বেতন, উৎসব বোনাস ও চাকরির নিশ্চয়তার দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন। একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা সড়কে নেমে আসলে পুরো ইপিজেড এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
খবর পেয়ে জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। দুপুরের দিকে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলেও শ্রমিকদের মধ্যে এখনো উদ্বেগ ও ক্ষোভ বিরাজ করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শ্রমিক বলেন, “আমরা কয়েক মাস ধরে বেতন ও ওভারটাইম বৃদ্ধি, উৎসব বোনাসসহ বিভিন্ন দাবি জানিয়ে আসছিলাম। কিন্তু কর্তৃপক্ষ কোনো সমাধান না দিয়ে উল্টো হঠাৎ করে কারখানা বন্ধ করে দিল। এখন পরিবার নিয়ে কীভাবে চলব বুঝতে পারছি না।”
আরেক নারী শ্রমিকের অভিযোগ, “আমাদের না জানিয়েই হঠাৎ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। শ্রমিকদের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি। এটা অন্যায়।”
স্থানীয় বাসিন্দা আরমান হোসেন বলেন, “এই ইপিজেডকে ঘিরেই এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্য চলে। শ্রমিকরা যদি বিক্ষোভ করে আর কারখানা বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে আমরাও বিপদে পড়ি। ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে দোকান দিয়েছি, এখন তা চালানো কঠিন হয়ে পড়বে।”
এ বিষয়ে নীলফামারী জেলা প্রশাসন জানায়, “পরিস্থিতি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। শ্রমিক ও মালিকপক্ষের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা চলছে। কোনো পক্ষই যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে বিষয়ে প্রশাসন সতর্ক রয়েছে।”
এদিকে, উত্তরা ইপিজেডে বর্তমানে প্রায় ৩০ হাজারেরও বেশি শ্রমিক কর্মরত। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে কিছু কারখানায় উৎপাদন কমে যাওয়া এবং বেতন-বোনাস সংক্রান্ত জটিলতার কারণে শ্রমিক অসন্তোষ বাড়ছিল। বিষয়টি নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক হলেও সমাধান হয়নি বলে শ্রমিকরা জানান।
উত্তরা ইপিজেড নীলফামারী জেলার অন্যতম বৃহৎ শিল্পাঞ্চল। এখানে স্থানীয় শ্রমিকদের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা শ্রমিকদেরও কর্মসংস্থান হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, কারখানাগুলো দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকলে জেলার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে এবং স্থানীয় ব্যবসা-বাণিজ্যও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।