নিজস্ব প্রতিনিধি:
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় হত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে করা মামলার রায়ের তারিখ আজ ঘোষণার জন্য ধার্য রয়েছে।
উভয় পক্ষের চূড়ান্ত যুক্তিতর্ক শেষে বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ গত ২৩ অক্টোবর এ তারিখ নির্ধারণ করেন। ট্রাইব্যুনালের বাকি দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ট্রাইব্যুনাল এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে; সকাল থেকে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও আনসার সদস্যরা কয়েক স্তরের নিরাপত্তা বলয়ে দায়িত্ব পালন করবেন। সুপ্রিম কোর্ট ট্রাইব্যুনালে সেনা মোতায়েনের জন্য সেনা সদরদপ্তরে ইতোমধ্যে চিঠি পাঠিয়েছে।
প্রসিকিউশন সূত্রে জানা গেছে, রায়ের তারিখ ঘোষণা হলেও রায় যে কোনো দিন ঘোষণা হতে পারে। এটি জুলাই গণঅভ্যুত্থান–সম্পর্কিত মানবতাবিরোধী অপরাধে ট্রাইব্যুনালের প্রথম মামলা, যার সাক্ষ্যগ্রহণ ও বিচারিক কার্যক্রমে ৫৪ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দেন। সাক্ষীদের বয়ানে উঠে এসেছে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীকে উসকানি দেওয়া, গৃহযুদ্ধ সৃষ্টি করার চেষ্টা এবং আন্দোলনের সময় ব্যাপক হত্যাকাণ্ড ও নির্যাতনের নির্দেশনার অভিযোগ।
প্রসিকিউশন বলেছে, উপস্থাপিত প্রমাণ পৃথিবীর যে কোনো আদালতে অপরাধ প্রমাণের জন্য যথেষ্ট এবং তারা আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি কামনা করছে। এদিকে রায়কে ঘিরে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নাশকতার আশঙ্কা উল্লেখ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় বিশেষ নজরদারি করছে। সুপ্রিম কোর্ট, ট্রাইব্যুনাল চত্বর, অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়, বার ভবন ও জাতীয় ঈদগাহ এলাকায় বহিরাগত প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগ নৈরাজ্যের মাধ্যমে বিচারপ্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করতে চাইছে, তবে এটি বিচার ব্যবস্থার জন্য হুমকি নয় এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শক্ত হাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখবে। প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার বলেন, আওয়ামী লীগ আদালত মোকাবিলা না করে সড়কে সহিংসতা সৃষ্টি করছে। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বর্তমানে পাঁচটি মামলার বিচার চলছে, যার মধ্যে জুলাই হত্যাকাণ্ডে মাস্টারমাইন্ড হিসেবে একটি মামলার রায় ঘোষণা হতে যাচ্ছে।
এর আগে চলতি বছরের ২ জুলাই আদালত তাকে আদালত অবমাননার মামলায় ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়—এটাই তার প্রথম সাজা। এছাড়া গুম-খুন, নির্যাতন ও হেফাজত নেতাকর্মীদের হত্যা-নির্যাতন সংক্রান্ত আরও কয়েকটি মামলার বিচারও চলমান।
অভিযোগ রয়েছে, জুলাই আন্দোলন চলাকালে তার নির্দেশে ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ৩৬ দিনে দেড় হাজারের বেশি মানুষ নিহত এবং ৩০ থেকে ৩৫ হাজার আহত হন।
১০ জুলাই ট্রাইব্যুনাল আন্দোলন দমনে ১৪০০ জনকে হত্যার উসকানি, প্ররোচনা, নির্দেশ, ‘সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসিবিলিটি’ এবং ‘জয়েন্ট ক্রিমিনাল এন্টারপ্রাইজ’-এর পাঁচ অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে বিচার শুরুর আদেশ দেয় এবং ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত ১০৩ দিনে বিচারিক কার্যক্রম সম্পন্ন হয়।