২২শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১লা জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

পটুয়াখালী ভার্সিটির, ভূমিকম্প পরিমাপক যন্ত্র ১৫ বছর ধরে অচল

জাকির হোসেন হাওলাদার, দুমকী ও পবিপ্রবি প্রতিনিধি :

২০১০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় পবিপ্রবি ক্যাম্পাসে সিসমোগ্রাফি যন্ত্র বসানো হয়। ২০১১ সালের শুরুতেই এটি বিকল হয়ে পড়ে। ফের চালু করার কয়েক মাসের মধ্যেই তা অচল হয়ে যায় দক্ষিণাঞ্চলে ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণের একমাত্র স্থায়ী যন্ত্র পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (পবিপ্রবি) স্থাপিত সিসমোগ্রাফটি দেড় যুগ ধরে পড়ে আছে।

প্রায় অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ যন্ত্রটি সচল না থাকায় ২১ তারিখ ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্পসহ সাম্প্রতিক কয়েকটি কম্পনের আনুষ্ঠানিক তথ্য সংগ্রহ সম্ভব হয়নি। এতে ভূমিকম্পপ্রবণ এ অঞ্চলের সাড়ে চার কোটি মানুষ বাস্তব ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র বলছে, ২০১০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের সহযোগিতায় দেশের পাঁচটি এবং দুটি জেলা শহরে আধুনিক সিসমোগ্রাফি যন্ত্র বসানো হয়। সেই প্রকল্পের অংশ হিসেবেই পবিপ্রবি ক্যাম্পাসে যন্ত্রটি স্থাপন করা হয়। শুরুতে মাত্র দুটি ভূমিকম্পের রেকর্ড পেলেও ২০১১ সালের শুরুতেই এটি বিকল হয়ে পড়ে। একই বছরের মধ্যভাগে আন্ডারগ্রাউন্ড চেম্বারে নতুন করে ইন্টারনেট সংযোগ স্থাপন করে যন্ত্রটিকে ফের চালু করা হলেও কয়েক মাসের মধ্যেই ফের তা অচল হয়ে যায়।

ভূমিকম্প-বিজ্ঞানীরা জানান, ভূকম্পনের সময় প্রাইমারি, সেকেন্ডারি, সারফেস ও রেলি-এ চার ধরনের কম্পন তরঙ্গ ছড়ায়। প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি তরঙ্গ আগে পৌঁছায় এবং সারফেস ও রেলি ওয়েভ আসতে এক থেকে দুই মিনিট সময় লাগে। একটি কার্যকর সিসমোগ্রাফ থাকলে এ সময় ব্যবধান কাজে লাগিয়ে আগাম সতর্কতা দেওয়া সম্ভব, যা জানমালের ক্ষতি ব্যাপকভাবে কমাতে পারে। এ

ছাড়া মাটির নিচে স্থাপিত প্লেটের মাধ্যমে ভূমির উচ্চতা পরিবর্তন-উঁচুতে উঠছে নাকি নিচে নামছে-তা নিরীক্ষণ করা হয়, যা সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।যন্ত্রটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা পবিপ্রবির ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. মুনীবুর রহমান বর্তমানে শিক্ষা ছুটিতে জার্মানিতে অবস্থান করছেন।

বিভাগের অধ্যাপক ড. এসএম তাওহীদুল ইসলাম বলেন, এটি বহু পুরোনো একটি অ্যানালগ সিস্টেম। এখন বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে ডিজিটাল সিসমোগ্রাফ ব্যবহৃত হচ্ছে। যেহেতু এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত একটি প্রকল্পের অংশ, তাই যন্ত্রটির ভবিষ্যৎ ও সম্ভাব্য সমাধান সম্পর্কে তারাই স্পষ্ট করে বলতে পারবেন।

গতকাল সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৭। এর উৎপত্তিস্থল নরসিংদীর মাধবদী। ভূমিকম্পে ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদীতে শিশুসহ ১০ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। আহত হয়েছেন কয়েক শতাধিক।

দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে দক্ষিণাঞ্চলের একমাত্র ভূকম্পন মাপার যন্ত্র অচল থাকায় বড় ধরনের বিপর্যয়ের আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না বিশেষজ্ঞরা। এ অবস্থায় দ্রুত নতুন প্রযুক্তিনির্ভর সিসমোগ্রাফ স্থাপন ও নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা নিশ্চিত করার দাবি উঠেছে স্থানীয় গবেষক ও সচেতন মহলের পক্ষ থেকে।।

ফেসবুকে আমরা

মন্তব্য করুন

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সর্বাাধিক পঠিত নিউজ

Scroll to Top