১৮ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৪ঠা আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২২শে জিলহজ, ১৪৪৬ হিজরি

শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির আরেক নাম বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের হেলথ কেয়ার

আরাফাত হুসাইন (বাকৃবি সংবাদদাতা) :

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) হেলথ কেয়ার সেন্টারে মানসম্মত সেবা না পাওয়ার কারণে আশাহত শিক্ষার্থীরা । প্রচলিত গুটিকয়েক ওষুধেই সীমাবদ্ধ এখানকার স্বাস্থ্যসেবা বলে ক্ষোভ জানান শিক্ষার্থীরা। এইদিকে আরও জানানো হয়, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাবে কোনো গুরতর সমস্যার সম্মুখীন হলেই পাঠিয়ে দেয়া হয় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও শিক্ষার্থীদের চলছে নানান আলোচনা – সমালোচনা।

জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলিয়ে প্রায় ১০ হাজার মানুষের বিপরীতে হেলথ কেয়ারে বর্তমানে রয়েছে মাত্র ৮ জন চিকিৎসক। এদের মধ্যে চীফ মেডিকেল অফিসারসহ নিয়মিত চিকিৎসক আছেন ৬ জন ও খন্ডকালীন চিকিৎসক ২ জন। কিন্তু দীর্ঘদিন যাবত ৫ টি মেডিকেল অফিসারের পদ শূন্য থাকায় রোগীরা পাচ্ছেন না নিয়মিত সেবা।

এছাড়া স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে নেই কোনো নার্সের পদ, নেই কোনো বিশেষায়িত ইউনিট। এমনকি কোনো ডেন্টাল ইউনিটও নেই। সর্বশেষ ১৪ বছর আগে একজন খণ্ডকালীন ডেন্টাল চিকিৎসক এখানে কর্মরত ছিলেন। ২০১১ সালে তিনি চলে যাওয়ার পর থেকে গত ১৪ বছরে নতুন কোনো চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হয়নি। ডেন্টাল চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত যন্ত্রপাতিগুলো এখন প্রায় অকেজো হয়ে পড়েছে।

বর্তমানে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে ১০ জন কর্মকর্তা এবং ১৬ জন কর্মচারী কর্মরত আছেন। এর মধ্যে ৬ জন নিয়মিত কর্মচারী, ৭ জন মাস্টার রোলে নিয়োজিত। এছাড়া ৩টি পদ শূন্য থাকায় ঘাটতি পূরণের জন্য অন্য শাখা থেকে ৩ জন কর্মচারী এনে দায়িত্ব পালন করা হচ্ছে।

স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে ৭ ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক, গ্যাসের ওষুধ, চর্মরোগের মলম এবং প্যারাসিটামল বিনামূল্যে সরবরাহ করা হলেও চাহিদার তুলনায় তা যথেষ্ট নয়। দিনের বেলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের তুলনায় বহিরাগত রোগীর সংখ্যা বেশি থাকে। এছাড়া লিফট বন্ধ থাকায় হাঁটা-চলা করতে অক্ষম রোগীদের চরম ভোগান্তির শিকার হতে হয়।

সরেজমিনে পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের নিচতলার টয়লেটগুলো অপরিচ্ছন্ন, কিছু টয়লেটের দরজা ভাঙা। স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের বাইরেই রয়েছে ময়লার ভাগাড়, যেখানে বিভিন্ন আবাসিক হলের ময়লা ফেলা হয়। দিনের বেলায় প্রায়ই কেন্দ্রটির বারান্দা মোটরসাইকেল পার্কিংয়ের জন্য ব্যবহৃত হতে দেখা যায়। এছাড়া, স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের তৃতীয় ও চতুর্থ তলা কয়েক বছর ধরে নারী শিক্ষার্থীদের সাময়িক আবাসনের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে।

 

বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক শিক্ষার্থী হাসান তপু জানান, ‘আমি কয়েকদিন আগে শ্বাসকষ্ট নিয়ে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে আমাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেতে বলা হয়। অথচ, বিশ্ববিদ্যালয়ের হেলথ কেয়ারে জরুরি চিকিৎসার সব ব্যবস্থা থাকার কথা। কিন্তু ডাক্তার নেই, ওষুধ নেই। আসলে পুরো ব্যবস্থাপনাই অগোছালো।

অ্যাম্বুলেন্সের সমস্যা ও সংকট বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী মাহিরুজ্জামান নিলয় বলেন, অ্যাম্বুলেন্স প্রয়োজনের সময় পাওয়া যায় না। অ্যাম্বুলেন্স পাওয়া খুব জটিল একটি প্রক্রিয়া। ডাক্তারের সিগনেচার হতে শুরু করে আরো অনেক নাটক। তার উপর অ্যাম্বুলেন্সের ভেতর ভাঙ্গা। সাইরেন ঠিক নেই। বাজেই না। অ্যাম্বুলেন্স যেন লক্কর ঝক্কর গাড়ি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের চীফ মেডিকেল অফিসার ডা. মো. সাঈদুর রহমান (শওকত) জানান, আমাদের হেলথ কার্ড রেডি। ভিসি মহোদয় ও এডভাইজার মহোদয়ের সাথে কথা বলে শীঘ্রই এটা আমরা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের হাতে পৌঁছে দিবো বিশ্ববিদ্যালয় ব্যক্তিগতভাবে কোন ঔষুধ কিনে না। সরকারি কিছু ক্রয় নীতিমালা আছে। ওষুধের গুনগত মান ও মূল্য দেখেই এই ওষুধ ক্রয় করা হয়।

হেলথ কেয়ারের পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যাপারে তিনি জানান, ‘একটা সময় কেবল ৮-১০টা টেস্ট করা হতো যা এখন করা হয় ২৮ টা। যার মধ্যে ১৫ টা টেস্ট করা হয় নামমাত্র মূল্যে। ডেঙ্গু টেস্ট, ইউরিন টেস্ট সম্পূর্ণ ফ্রি। বাকি টেস্টগুলোর দামও বাহিরের হাসপাতাল গুলো থেকে অনেক কম, ছাত্রদের জন্য প্রায় ৬০-৭০% ছাড়। তাছাড়া এক্সরের জন্য রয়েছে ডিজিটাল মেশিন।’

অ্যাম্বুলেন্স এর কাঠামোগত ত্রুটি ও সময় মতো না পাওয়ার বিষয়ে নিয়ে ডা. সাঈদুর বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল গাড়ি পরিবহন শাখার অন্তর্গত। দুইটা অ্যাম্বুলেন্স এর মধ্যে একটা সব সময় থাকে, একটা রিজার্ভ থাকে। অ্যাম্বুলেন্স কে নিচ্ছে সবই রেকর্ড থাকে। অ্যাম্বুলেন্স ভাঙ্গা কিনা, জ্বালানি আছে কিনা সব দেখে পরিবহন শাখা।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল হক বলেন, হেলথ কেয়ারের ডাক্তার সংকট সমস্যার ব্যাপারে আমরা অবগত আছি। সমস্যাটি সমাধানের ব্যাপারে ইতোমধ্যেই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে এবং তা নিরসরণের কাজও শুরু হয়েছে। ডাক্তার নিয়োগের ব্যাপারটি সময় সাপেক্ষ একটি ব্যাপার। তাই ডাক্তার সংকটের সমস্যা দূর করতে কিছুটা সময় লাগবে। তবে ঔষধের ব্যাপারটি খতিয়ে দেখে খুব দ্রুতই ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একজন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ নিয়োগের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

ফেসবুকে আমরা

মন্তব্য করুন

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সর্বাাধিক পঠিত নিউজ

Scroll to Top