২রা মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৯শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ৪ঠা জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় উত্তাল ; শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহারের আল্টিমেটাম 

রবিউল শিকদার , ববি প্রতিনিধিঃ

ফ্যাসিস্ট পুনর্বাসনের অভিযোগ এনে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি) ফের উত্তাল হয়ে উঠেছে।গত ১৪ ফেব্রুয়ারি শুক্রবারে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শূচিতা শরমিনের বিরুদ্ধে গোপন সিন্ডিকেট ও ফ্যাসিস্ট পুনর্বাসনের অভিযোগে উপাচার্যের বাসভবনের গেট ভেঙে প্রবেশ করে শিক্ষার্থীরা। পরে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি রাত ১০টায় গেট ভাঙা জড়িত থাকার ঘটনা ও বিভিন্ন কারণ উল্লেখ করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে বরিশাল বন্দর থানায় অভিযোগ দেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষে সহকারী রেজিস্ট্রার (নিরাপত্তা শাখা) সানোয়ার পারভেজ লিটন। এ অভিযোগে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ২০-২৫ জনকে আসামি করা হয়। অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করেন বন্দর থানার ওসি রফিকুল ইসলাম। এসকল ঘটনার প্রেক্ষিতে রবিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে ১২ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাউন্ড ফ্লোরে সংবাদ সম্মেলন করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। সংবাদ সম্মেলনে ৫ দফা দাবি সহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের করা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের জন্য ছয় ঘন্টা অর্থাৎ সন্ধ্যা পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দেন তাঁরা। আজ সন্ধ্যার মধ্যে অভিযোগ বা মামলার আবেদনটি প্রত্যাহার না করলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন শিক্ষার্থীরা। বিকাল ৪ টার দিকে অযোগ্য উল্লেখ করে প্রক্টর এ টি এম রফিকুল ইসলাম ও প্রক্টরিয়াল বডিকে পদত্যাগের দাবি জানান আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

 

লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী মোকাব্বেল শেখ জানান, আমরা আমাদের দাবি নিয়ে উপাচার্যের সাথে কথা বলতে চেয়েছি, তিনি আমাদের সাথে বসেননি। বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের বাদ দিতে বললে তিনি তা করেননি। সিন্ডিকেটের এজেন্ডা না জানিয়ে আওয়ামী পুনর্বাসনের জন্য গোপন সিন্ডিকেট ডাকেন উপাচার্য। কোথায়-কখন -কাকে বদলি করবেন,কোথায় কি হবে এগুলো তার মাথা থেকে আসেনা। তিনি আমাদের দাবি না মেনে বাইরের আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের যুক্তি ও পরামর্শ শুনে তিনি এসব কাজ করছেন।এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরের আওয়ামী দালালদের কথা শুনে বিভিন্ন অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।

ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী মোশাররফ হোসেন জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আশা আকাঙ্খা ছিলো উন্নয়নমূলক কাজের প্রতিফলন ঘটুক। উপাচার্য শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে কাজ করবে অথচ তিনি ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসন করার চেষ্টা করছে। গত ২৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগকে দরজা ভেঙে ছাড়ানো ও ২৯ জুলাই আন্দোলনকারীদের উপর হামলার ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে। শিক্ষার্থীরা একটি যৌক্তিক আন্দোলন করতে পারে,ভুল ত্রুটি হতে পারে কিন্তু একজন অভিভাবক সমতুল্য উপাচার্য কিভাবে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা করে। উপাচার্যের নির্দেশে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের করা মামলার বিষয়টাতে বোঝা যায় তিনি ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসন করার চেষ্টা করছেন। অনতিবিলম্ব আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের করা মামলা প্রত্যাহার করে নিতে হবে।

এদিকে এসব উদ্ভূত পরিস্থিতির ঘটনার পিছনে উপাচার্য দায়ী করেছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য, ট্রেজারার ও ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোঃ মুহসিন উদ্দীনকে।

উপাচার্য শুচিতা শরমিন এ প্রসঙ্গে বলেন,আমি ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসন করছি এরকম গুজব উদ্দেশ্যমূলকভাবে ছড়ানো হয়েছে। এর পেছনে কয়েকজন স্বার্থান্বেষী শিক্ষক সহ তিনজন ব্যক্তি জড়িত। যাঁরা চিঠি দিয়ে সিন্ডিকেট সভায় যোগ না দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল। অথচ বহিঃস্থ সিন্ডিকেট সদস্য যারা, তাঁরা সকলেই বর্তমান সরকার ও জুলাই চেতনার ধারণ করা ব্যক্তি।

তিনি জানান, শনিবার আমাদের সিন্ডিকেটের জরুরি মিটিং ছিল। আমাদের ১০ জন সদস্য নিয়ে সফলভাবে আমরা মিটিংটি করেছি। কয়েকজন এতে ভার্চ্যুয়ালি যোগ দেন।  এসময় ২০-২৫ জন শিক্ষার্থী আমার বাসভবনের ফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে নানান কুরুচিপূর্ণ স্লোগান দেয়। বুলডোজার দিয়ে বাড়িয়ে গুড়িয়ে দেওয়া, আগুন দেওয়ার হুমকি দেয়। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের পরই চেষ্টা করছি একাডেমিক ও প্রশাসনিক মান উন্নয়নের। অবকাঠামো উন্নয়নর জন্য আমি মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি, দেখা করেছি। ইউজিসির সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করছি। কিন্তু শুরু থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির জন্য কয়েক ব্যক্তি নানা ইস্যু সৃষ্টি করে কিছু শিক্ষার্থীকে উস্কে দিচ্ছেন। যেটা কাম্য নয়।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম রব্বানী বলেন, শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত ও বিভিন্ন দাবি নিয়ে আন্দোলন করছে। কিন্তু এখানে তো আমার সংশ্লিষ্ট থাকার কথা না।বরং আমরা তাদের দাবি ও সমস্যা নিয়ে কাজ করতে চাই।উপাচার্য সহ আমরা যে তিনজন আছি এসব উদ্ভূত পরিস্থিতি একসাথে বসে শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে সমাধান করা যেত।

তিনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পরে আমাকে দায়িত্ব পালন করার জন্য উপাচার্য কোন সহযোগিতা করেনি। দায়িত্ব বুঝিয়ে দেননি। দায়িত্ব দিলে শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে আমরা সমাধান করার চেষ্টা করতাম। সুযোগ কেন দিচ্ছেনা তা উপাচার্যই জানে। যোগদানের পর সাড়ে তিনমাসেও একটা ফাইলও আমার টেবিলে আসেনি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. হারুন অর রশিদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল সিদ্ধান্ত উপাচার্যই একাই নিয়ে থাকে।আমি আসার পরে আমাদের কোন মিটিংয়ে ডাকেন না,কোন সিদ্ধান্তে আমাদের মতামত নেওয়া হয়না।

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

এই বিভাগের আরও খবর

মুরাদনগরে অফিস সংস্কারে চাঁদা তোলার অভিযোগ সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে

মো: সাদেকুল ইসলাম, মুরাদনগর প্রতিনিধি: কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ হায়াতুন্নবীর বিরুদ্ধে শিক্ষকদের কাছ থেকে চাঁদা তুলে অফিস কক্ষ সংস্কারের অভিযোগ উঠেছে।

নান্দাইলে শিক্ষার মান উন্নয়নে ইউএনও’র আকস্মিক স্কুল পরির্দশন

মোঃ শহিদুল ইসলাম পিয়ারুল, ময়মনসিংহ জেলা প্রতিনিধি : ময়মনসিংহের নান্দাইলে শিক্ষার মান উন্নয়ন ও মানসম্মত শিক্ষার পরিবেশ গঠনের লক্ষ্যে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সারমিনা সাত্তার স্কুল

নীলফামারীতে এসএসসি কৃতি শিক্ষার্থীদের আইজিপি শিক্ষাবৃত্তি প্রদান

মো. সাইফুল ইসলাম, নীলফামারী প্রতিনিধিঃ নীলফামারী পুলিশ লাইন একাডেমীর এসএসসি কৃতি শিক্ষার্থীদের মাঝে আইজিপি শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করেছে বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার্স কল্যাণ সমিতি। শনিবার (২৬

ডিমলায় পাঠদানের সময় ছাদের বীম ধসে আহত হয়েছেন এক শিক্ষিকা ও তার নয় মাসের শিশু সন্তান

মোঃ বাদশা প্রামানিক নীলফামারী প্রতিনিধি: ডিমলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদানের সময় সময় জোরাজির্ণ ভবনের ছাদের বীম ধসে পড়ে গুরুতর আহত হয়েছেন এক শিক্ষিকা ও তার

Scroll to Top