আসগর সালেহী, চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:
চট্টগ্রাম নগরীতে প্রথমবারের মতো নির্মিত হতে যাচ্ছে ৫৪ কিলোমিটার দীর্ঘ মনোরেল। বিদেশি বিনিয়োগে প্রায় ২০ থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত এই প্রকল্প সম্পন্ন হলে চট্টগ্রাম দক্ষিণ এশিয়ার ‘গেটওয়ে’ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন।
রোববার (১ জুন) আগ্রাবাদ ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে চেম্বার মিলনায়তনে চসিক ও বিদেশি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অনুষ্ঠিত এক সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
মেয়র ডা. শাহাদাত বলেন, ‘চট্টগ্রামের যানজট নিরসন, পরিবেশ সংরক্ষণ ও টেকসই গণপরিবহন ব্যবস্থার লক্ষ্যে আমরা দীর্ঘদিন ধরে নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। তবে মনোরেল প্রকল্প হবে এ সমস্যাগুলোর সবচেয়ে কার্যকর এবং স্থায়ী সমাধান।’
তিনি জানান, প্রস্তাবিত প্রকল্পের সম্পূর্ণ অর্থায়ন করবে বিদেশি দুটি প্রতিষ্ঠান— ওরাসকম কনস্ট্রাকশন ও আরব কন্ট্রাক্টরস। এ প্রকল্পে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আর্থিক কোনো দায় থাকবে না। চসিক শুধু ভূমি বরাদ্দ এবং প্রয়োজনীয় লজিস্টিক সহায়তা প্রদান করবে।
মেয়র আরও বলেন, ‘এই মনোরেল শুধু যানজট নিরসনে অবদান রাখবে না, বরং চট্টগ্রামকে আধুনিক, ব্যবসাবান্ধব ও পরিবেশবান্ধব নগরীতে রূপান্তর করবে। নগর উন্নয়নের অংশ হিসেবে আমরা “ওয়ান সিটি, টু টাউন” কাঠামো বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।’
এ সময় তিনি চট্টগ্রাম বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার প্রয়োজনীয়তার কথাও উল্লেখ করে বলেন, ‘কক্সবাজারের পাশাপাশি চট্টগ্রাম বিমানবন্দরকেও আধুনিক করতে হবে। কারণ, চট্টগ্রাম যদি পর্যটননগরী হতে চায়, তাহলে আন্তর্জাতিক মানের বিমানবন্দর অপরিহার্য।’
অনুষ্ঠানে গ্রেটার চিটাগাং ইকোনমিক ফোরামের সভাপতি আমীর হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘চট্টগ্রামকে স্মার্ট ও টেকসই নগরীতে রূপান্তরের অংশ হিসেবে মনোরেল প্রকল্প অত্যন্ত সময়োপযোগী। নাগরিক, ব্যবসায়ী ও পেশাজীবীদের সঙ্গে নিয়ে আমরা এ প্রকল্প বাস্তবায়নে পাশে থাকব।’
প্রকল্পের অর্থায়ন ও প্রযুক্তিগত দিক তুলে ধরে আরব কন্ট্রাক্টরস ও ওরাসকম পেনিনসুলা কনসোর্টিয়ামের চীফ রিপ্রেজেন্টেটিভ কাউসার আলম চৌধুরী বলেন, ‘চট্টগ্রাম বাংলাদেশের বাণিজ্যিক রাজধানী। এখানে যানজট ও পরিবহন সংকট দিন দিন বাড়ছে। মনোরেল হবে আধুনিক এবং পরিবেশবান্ধব একটি সমাধান। আমরা এ প্রকল্পে পূর্ণ বিনিয়োগে আগ্রহী। এটি পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) মডেলে বাস্তবায়িত হবে। বিনিয়োগ আসবে NAS Investment ও National Bank of Egypt-এর মাধ্যমে।’
তিনি জানান, সম্ভাব্য তিনটি রুটে মনোরেল চলবে। প্রথম রুট (লাইন-১) হবে ২৬.৫ কিলোমিটার, যা কালুরঘাট থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত (বহদ্দারহাট, চকবাজার, লালখান বাজার, দেওয়ানহাট ও পতেঙ্গা) বিস্তৃত। দ্বিতীয় রুট (লাইন-২) হবে ১৩.৫ কিলোমিটার, এটি সিটি গেট থেকে শহীদ বাশিরুজ্জামান স্কয়ার পর্যন্ত (এ.কে. খান, নিমতলী, সদরঘাট, ফিরিঙ্গি বাজার)। তৃতীয় রুট (লাইন-৩) হবে ১৪.৫ কিলোমিটার, অক্সিজেন থেকে ফিরিঙ্গি বাজার পর্যন্ত (মুরাদপুর, পাঁচলাইশ, আন্দরকিল্লা, কোতোয়ালি) চলবে।
তিনি আরও বলেন, টিকিট বিক্রির পাশাপাশি মনোরেল থেকে রাজস্ব আসবে বিজ্ঞাপন, স্টেশনভিত্তিক দোকান ও আশপাশের জমির মূল্যবৃদ্ধির মাধ্যমে। ভালো গণপরিবহন ব্যবস্থা অর্থনীতিতে ৫ থেকে ৭ গুণ রিটার্ন দিতে পারে।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা সরোয়ার কামাল, গ্রেটার চিটাগাং ইকোনমিক ফোরামের সদস্য সচিব নাজির শাহীনসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।