নিজস্ব প্রতিনিধি:
যুক্তরাজ্য সফররত অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে দেখা করতে পারছেন না। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া কয়েক বিলিয়ন ডলার উদ্ধার চেষ্টার অংশ হিসেবে তিনি এই সফরে রয়েছেন। তবে স্টারমারের দপ্তর জানিয়েছে, তার সঙ্গে ইউনূসের বৈঠকের কোনো পরিকল্পনা নেই।
যুক্তরাজ্যের সহায়তা প্রত্যাশা
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমস-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস বলেন, “এই টাকাগুলো চুরি হয়েছে।” তিনি যুক্তরাজ্যের প্রতি আহ্বান জানান, বাংলাদেশ সরকারের এই অনুসন্ধানে সহায়তা করতে ব্রিটেনের উচিত ‘নৈতিক ও আইনি দায়বদ্ধতা’ বোধ করা। তার দাবি, চুরি হওয়া এই অর্থের একটি বড় অংশ যুক্তরাজ্যেই রয়েছে।
ড. ইউনূস আরও বলেন, “আমার সরাসরি স্টারমারের সঙ্গে কথা হয়নি। তবে আমি বিশ্বাস করি তিনি আমাদের প্রচেষ্টায় সহযোগিতা করবেন।”
কোনো প্রতিশ্রুতি নেই ব্রিটেনের
যুক্তরাজ্য সরকারের একজন মুখপাত্র জানান, ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ বর্তমানে ইউনূসের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কোনো সাক্ষাৎসূচি রাখেনি। এ বিষয়ে বিস্তারিত মন্তব্য করতেও তারা অনিচ্ছুক।
তবে ড. ইউনূস বলেন, তিনি আশা করছেন যুক্তরাজ্য আরও কার্যকর ও ‘উদ্যমী ভূমিকা’ নেবে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়ায়। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের দুর্নীতিবিরোধী অবস্থান আরও শক্তিশালী হবে এবং আন্তর্জাতিক মহলে একটি ইতিবাচক বার্তা যাবে বলে তিনি মনে করেন।
টিউলিপ ইস্যু ও রাজনৈতিক প্রভাব
স্টারমারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত শেখ হাসিনার ভাগ্নি টিউলিপ সিদ্দিক সম্প্রতি ব্রিটিশ মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। অভিযোগ উঠেছিল, তিনি আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠদের কাছ থেকে অবৈধভাবে সম্পদ গ্রহণ করেছেন। এই প্রেক্ষাপটে ইউনূসের বর্তমান সফর ও অর্থপাচার ফেরত আনার প্রচেষ্টা লেবার পার্টির ওপর রাজনৈতিক চাপে পরিণত হতে পারে।
দুর্নীতির অর্থ ফেরত পেলে লাভ বাংলাদেশের
ফিন্যান্সিয়াল টাইমস জানায়, নোবেলজয়ী ইউনূসের এই আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক প্রচেষ্টা তার নেতৃত্বাধীন সরকারের দুর্নীতিবিরোধী অবস্থানকে তুলে ধরে। তিনি যে বিপুল পরিমাণ চুরি হওয়া সম্পদ দেশে ফেরত আনতে চান, তা বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে এবং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা বাড়াতে পারে।
যদিও ইউনূস-স্টারমার বৈঠক এখনো হয়নি, তবু এই সফর আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও অবৈধ সম্পদ উদ্ধারের ক্ষেত্রে একটি বড় কূটনৈতিক পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। স্টারমার এখনো চুপ থাকলেও ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে বিষয়টি নতুন মোড় নিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।