২৫শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১১ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৯শে জিলহজ, ১৪৪৬ হিজরি

পিলখানা হত্যাকাণ্ড: পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র, তদন্তে উঠে এলো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা ও নিরাপত্তা গাফিলতির তথ্য

নিজস্ব প্রতিনিধি:

২০০৯ সালের ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় বিডিআর সদর দপ্তরে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডকে “দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র” হিসেবে উল্লেখ করেছে জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশন। বুধবার ঢাকার সায়েন্স ল্যাবরেটরির বিআরআইসিএম ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে কমিশনের সভাপতি ও বিডিআরের সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) আ. ল. ম ফজলুর রহমান এ তথ্য জানান।

দুই পলাতক আওয়ামী নেতার জবানবন্দি

ফজলুর রহমান জানান, তদন্ত কমিশন এই ঘটনায় রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পেয়েছে। পলাতক দুই আওয়ামী লীগ নেতা—প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং সাবেক সাংসদ ও সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম—ই-মেইলে জবানবন্দি দিয়েছেন। আরও ছয় রাজনৈতিক নেতার সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে, যাদের মধ্যে তিনজন কারাগারে এবং তিনজন সরাসরি উপস্থিত ছিলেন।

সামরিক নিষ্ক্রিয়তা ও সময়ক্ষেপণের অভিযোগ

কমিশনের বক্তব্যে উঠে এসেছে, বিদ্রোহ চলাকালে সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কার্যত নিষ্ক্রিয় ছিল। আটকাপড়া সেনা কর্মকর্তাদের বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও কোনো সহায়তা দেওয়া হয়নি। ‘রাজনৈতিকভাবে সমস্যা সমাধান’-এর নামে সময়ক্ষেপণই হত্যাযজ্ঞের পথ খুলে দেয়। সময়মতো সামরিক পদক্ষেপ নিলে প্রাণহানি এড়ানো যেত বলে জানিয়েছে কমিশন।

গোয়েন্দা ব্যর্থতা ও বিদেশি সংশ্লিষ্টতার ইঙ্গিত

ফজলুর রহমান বলেন, গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ব্যর্থতা, আলামত নষ্ট করা এবং ঘটনাকে ভিন্নখাতে নেওয়ার চেষ্টার প্রমাণ পাওয়া গেছে। কিছু জবানবন্দিতে বিদেশি শক্তির ইন্ধনের ইঙ্গিতও মিলেছে।

মিডিয়া ও বিদ্রোহ উসকে দেওয়া

সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, কিছু গণমাধ্যম পক্ষপাতদুষ্ট সংবাদ প্রচার করে বিদ্রোহকে উসকে দিয়েছে এবং সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে।

সাক্ষ্য ও তথ্য সংগ্রহ

কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ১৫৮ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন:

  • ৫৫ জন সাবেক সামরিক কর্মকর্তা (তিন বাহিনীর সাবেক প্রধানসহ)

  • ২০ জন বেসামরিক কর্মকর্তা (সাংবাদিক, আমলা, আইজিপি, ডিএমপি কমিশনার)

  • ৯ জন বেসরকারি নাগরিক

  • ২৫ জন দণ্ডপ্রাপ্ত ও ২৯ জন কারামুক্ত বিডিআর সদস্য

  • ১৫ জন শহীদ পরিবারের সদস্য ও বেঁচে ফেরা কর্মকর্তা

আরও তথ্য সংগ্রহের উদ্যোগ

কমিশন ছয়টি দেশের দূতাবাস ও জাতিসংঘ আবাসিক কার্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। এখনো কিছু গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীর সন্ধান মেলেনি। ৩৩ জনের বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। তিনটি বিশেষ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে পলাতকদের জবানবন্দি আহ্বান করা হয়েছে।

সময়সীমা বাড়ানোর আবেদন

তদন্ত কাজ সম্পূর্ণ করতে কমিশন ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় বৃদ্ধির অনুরোধ করেছে। কমিশন বলেছে, এ হত্যাকাণ্ড কেবল বিদ্রোহ নয়, বরং একটি পরিকল্পিত গণহত্যা। যার পেছনে ছিল রাজনৈতিক ইন্ধন, নিরাপত্তা ব্যর্থতা এবং চরম গাফিলতি।

ফেসবুকে আমরা

মন্তব্য করুন

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সর্বাাধিক পঠিত নিউজ

Scroll to Top