নিজস্ব প্রতিনিধি:
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক এবং মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত উমামা ফাতেমা আনুষ্ঠানিকভাবে এই প্ল্যাটফর্ম থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। শুক্রবার (২৭ জুন) রাতে নিজের ফেসবুক পোস্টে তিনি এ সিদ্ধান্তের কথা জানান। পোস্টটিতে উঠে এসেছে আন্দোলনের অভ্যন্তরীণ নানা অনিয়ম, বৈষম্য, অপমান এবং রাজনীতিক চাপের বাস্তবতা।
উমামা লেখেন, “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কাউন্সিল শেষ হয়েছে। এখানেই এই প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে আমার আনুষ্ঠানিক যাত্রার ইতি।”
তিনি বলেন, এনসিপি গঠনের পর তিনি জুলাইয়ের অসমাপ্ত কাজ চালিয়ে নিতে আন্দোলনে সক্রিয় হয়েছিলেন, কিন্তু স্বাধীনভাবে কাজ করার চেষ্টা করলেই তাকে বাধা দেওয়া হতো। অনলাইন-অফলাইনে হুমকি, চাপ এবং অপমান তার নিত্যসঙ্গী হয়ে দাঁড়ায়।
অভিযোগের গভীরতা:
ফেসবুক পোস্টে উমামা জানান, আন্দোলনের ভেতরে ‘ভাই-ব্রাদার রাজনীতি’ এবং ক্ষমতা-ভিত্তিক বিভাজন প্ল্যাটফর্মকে ‘বদ্ধ জলাশয়ে’ পরিণত করেছে। নিজের বিরুদ্ধে কুৎসা রটানো, পেইজ থেকে পোস্ট করে চরিত্র হনন, এমনকি গণমাধ্যমেও তার ভূমিকা বিকৃতভাবে তুলে ধরার অভিযোগ তোলেন তিনি।
তিনি লিখেছেন, “যে মানুষগুলোর সঙ্গে আমি মিটিং করতাম, তারাই পরে জুনিয়রদের দিয়ে আমার বিরুদ্ধে প্রচার চালিয়েছে। অনেক সময় এমনও হয়েছে, রাতে কেউ আমার সঙ্গে কথায় একমত হয়ে পরদিন হেয়ার রোডে গিয়ে পদ নিয়ে বার্গেইনিং করেছে।”
কাউন্সিল নির্বাচন ও বিতর্ক:
কাউন্সিল নির্বাচনে সৎভাবে কাজ করার মানসিকতা নিয়েও হতাশা প্রকাশ করেন উমামা। জানান, ভোটের দিন পর্যন্ত ভোট না দেওয়ার সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন, কিন্তু শেষ মুহূর্তে শুধুমাত্র একজন সৎ প্রার্থীকে সমর্থন জানাতে ভোট দেন। অথচ পরে দেখেন, নির্বাচনে অংশ না নেওয়া কেউ একজন ‘মেম্বার’ হয়ে গেছেন।
তিনি লেখেন, “এই প্ল্যাটফর্মের ভবিষ্যৎ এখন অন্ধকার। শুধু বাহ্যিক আদর্শ নয়, অভ্যন্তরীণ রাজনীতি একে পুরোপুরি গিলে ফেলেছে।”
রাজনীতির নামে প্রতারণা ও চরম ক্ষোভ:
তিনি উল্লেখ করেন, “আমি অভ্যুত্থানের স্বপ্ন দেখে এই প্ল্যাটফর্মে এসেছিলাম, দেশের জন্য কিছু করার লক্ষ্য ছিল। কিন্তু এখানে গোষ্ঠীস্বার্থ, পদ-পদবী আর ছলনার বাইরে কিছু পাইনি। যারা আমার সঙ্গে প্রতারণা করেছে, নোংরামি করেছে—তাদের কখনো ক্ষমা করব না। অভ্যন্তরীণ রাজনীতিকে ব্যবসায় রূপান্তরিত করেছে কিছু স্বার্থান্বেষী।”
নতুন যাত্রার ইঙ্গিত:
উমামা বলেন, তিনি এখন তার আগের পরিচয়ে—একজন শিক্ষার্থী হিসেবে নিজের পড়াশোনা ও ভবিষ্যৎ গঠনে মনোযোগ দেবেন। ফেসবুক পোস্টের শেষাংশে তিনি লেখেন, “আমি গত ৮-৯ মাসকে ঝেড়ে ফেলে নতুনভাবে শুরু করতে চাই। অনেক ভালো মানুষ এই প্ল্যাটফর্মে ছিল, তাদের শুভবুদ্ধির জয় হোক।”
তিনি আরও লেখেন, “আমি ভেঙে পড়ছি না, গুছিয়ে আনছি সব কিছু। ফি আমানিল্লাহ।”
উমামা ফাতেমার এই পদত্যাগ ও ফেসবুক স্টেটমেন্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অভ্যন্তরীণ সংকট, গোপন গোষ্ঠীবাজি ও আদর্শচ্যুতির এক নির্মম চিত্র তুলে ধরেছে। তার এই বক্তব্য আগামী দিনে শিক্ষার্থী রাজনীতির স্বচ্ছতা ও দায়িত্ববোধ নিয়ে নতুন আলোচনার জন্ম দিতে পারে।