২০শে জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৫শে মহর্‌রম, ১৪৪৭ হিজরি

গোপালগঞ্জ সহিংসতা: রাজনৈতিক ফাঁদ নাকি প্রশাসনিক ব্যর্থতা?

নিজস্ব প্রতিনিধি:

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে সংঘটিত সহিংস ঘটনায় দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এই ঘটনাকে বিভিন্ন মহল থেকে ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে – কেউ এটিকে আওয়ামী লীগের কৌশলগত ফাঁদ হিসেবে দেখছেন, আবার কেউবা প্রশাসনিক দুর্বলতার ফল বলছেন।

ঘটনার পটভূমি বিশ্লেষণে দেখা যায়, এনসিপির কর্মসূচির আগে থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উত্তেজনা সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর সমাধি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এমন মিথ্যা গুজব ছড়ানো হয়, যা পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তোলে। অথচ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রস্তুতি এবং গোয়েন্দা তৎপরতা যথেষ্ট ছিল না বলে অভিযোগ উঠেছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নিজেই গোয়েন্দা তথ্যের ঘাটতি স্বীকার করেছেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এই ঘটনাকে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন পূর্ববর্তী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের কৌশল হিসেবে দেখছেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরীর মতে, “জুলাই গণহত্যা নিয়ে আওয়ামী লীগের কোনো অনুশোচনা নেই। তারা ইচ্ছাকৃতভাবে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করছে।”

ঘটনার পর বিএনপি তীব্র নিন্দা জানিয়ে একে ‘গণতন্ত্রবিরোধী নীলনকশা’ আখ্যা দিয়েছে। অন্যদিকে এনসিপি নেতারা নিজেদেরকে ভুক্তভোগী হিসেবে দাবি করে প্রশাসনের ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। এনসিপির মুখপাত্র আরিফুল ইসলাম আদীব জানান, “আমরা হুমকি সত্ত্বেও কর্মসূচি বাতিল করিনি। প্রশাসন যদি সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করত, এই পরিস্থিতি তৈরি হতো না।”

পুলিশের ভূমিকা নিয়েও বিতর্ক তৈরি হয়েছে। টেলিভিশন ফুটেজে দেখা গেছে, কিছু পুলিশ সদস্য নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন। যদিও পুলিশ কর্তৃপক্ষ দাবি করেছেন, তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে। ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিক জানিয়েছেন, ঘটনার তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এই ঘটনা রাজনৈতিক সংঘাতের নতুন মাত্রা যোগ করেছে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। একদিকে সরকার সমর্থকরা এনসিপির কর্মসূচিকে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা হিসেবে দেখছেন, অন্যদিকে বিরোধীপক্ষ এটিকে গণতন্ত্র হরণের নতুন কৌশল হিসেবে চিহ্নিত করছেন। গোপালগঞ্জের এই ঘটনা আসন্ন দিনগুলোর রাজনৈতিক গতিপ্রকৃতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

ফেসবুকে আমরা

মন্তব্য করুন

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সর্বাাধিক পঠিত নিউজ

Scroll to Top