নিজস্ব প্রতিনিধি:
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সোমবার জুলাই জাতীয় সনদের খসড়া ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠিয়েছে। এই সনদে রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থা, সংবিধান, বিচার বিভাগ, নির্বাচন ব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, পুলিশ ও দুর্নীতি দমন সংক্রান্ত বেশ কিছু প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। সনদটি গৃহীত হলে নির্বাচিত সরকার পরবর্তী দুই বছরের মধ্যে এসব সংস্কার বাস্তবায়ন করবে বলে অঙ্গীকার করা হয়েছে। এছাড়া, খসড়ায় ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন এবং গণ-অভ্যুত্থানের ঐতিহাসিক তাৎপর্যকে সংবিধানে স্বীকৃতি দেওয়ারও অঙ্গীকার রয়েছে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে দলগুলোর কাছে খসড়া পাঠানোর পর বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল আলাদাভাবে বৈঠক করে এ বিষয়ে আলোচনা করেছে। দলগুলোর মতামত পাওয়ার পর আগামী দু-তিন দিনের মধ্যে সনদে স্বাক্ষর করার কথা রয়েছে। ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তির আগেই চূড়ান্ত সনদ জাতির সামনে উপস্থাপন করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
খসড়ায় কিছু অংশ ফাঁকা রাখা হয়েছে, যেখানে পরবর্তী আলোচনায় ঐকমত্য হওয়া বিষয়গুলো যুক্ত হবে। সনদের শেষে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এবং কমিশনের সদস্যদের স্বাক্ষরের জন্য স্থান রাখা হয়েছে। এছাড়া, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও প্রতিনিধিদের স্বাক্ষরের জন্যও একটি অংশ সংরক্ষিত রয়েছে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানান, খসড়ায় সনদের পটভূমি, গঠন প্রক্রিয়া এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ভূমিকা সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, “যেসব বিষয়ে এখনও আলোচনা চলছে, সেগুলো খসড়ায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে মতামত চাওয়া হয়েছে। তাদের পরামর্শ বিবেচনা করে দ্রুত চূড়ান্ত করা হবে।”
চার পৃষ্ঠার খসড়ায় জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে সাত দফা অঙ্গীকার উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, জনগণের রক্ত ও ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত এই সনদের পূর্ণ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। সংবিধান, বিচারব্যবস্থা, নির্বাচন, জনপ্রশাসন, পুলিশ ও দুর্নীতি দমন ব্যবস্থায় প্রস্তাবিত সংস্কারগুলো পরবর্তী নির্বাচিত সরকার দুই বছরের মধ্যে বাস্তবায়ন করবে। এছাড়া, সনদে উল্লিখিত সংস্কারগুলোর আইনি ও সাংবিধানিক সুরক্ষা নিশ্চিত করারও অঙ্গীকার করা হয়েছে।
খসড়ার পটভূমিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের যে আকাঙ্ক্ষা জন্ম নিয়েছিল, তা দীর্ঘ ৫৩ বছরেও পূরণ হয়নি। ২০০৯ সাল থেকে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে ক্ষুণ্ণ করে রাষ্ট্রযন্ত্রকে দলীয়করণ করেছে। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরাচারী শাসনের অবসান ঘটে। এই আন্দোলনে হাজারো মানুষের আত্মত্যাগের পর রাষ্ট্র পুনর্গঠনের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
খসড়ায় আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয় এবং ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে কাজ শুরু করে এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার পর এই সনদ প্রণয়ন করা হয়েছে।
সনদের একাংশে বলা হয়েছে, “২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের শহীদ ও আহতদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে এবং আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে আমরা এই সনদকে ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ হিসাবে ঘোষণা করছি।”