নিজস্ব প্রতিবেদক :
ময়মনসিংহের ত্রিশালে এক বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে ভুয়া সনদ দিয়ে বিদ্যালয়ের সভাপতি হওয়ার চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। বিএ/অনার্স সনদ ভূয়া দাবি করে ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও ত্রিশাল উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোঃ জয়নাল আবেদীনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করেন ত্রিশাল পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি এ. বি এম. মাহবুব মুর্শেদ। গত ৭ জুলাই ত্রিশাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর এ অভিযোগ দাখিল করেন তিনি। জেলা প্রশাসক বলছেন যাচাই-বাছাই চলছে। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) বলছে, যে প্রতিষ্ঠান থেকে মোঃ জয়নাল আবেদীন বিএ/ অনার্স এর সার্টিফিকেট এনেছেন (দি ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লা) এই নামে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দেয়া হয়নি।
সম্প্রতি ত্রিশাল নজরুল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ রফিকুল ইসলাম বিদ্যালয়ের এডহক (ম্যানেজিং) কমিটির সভাপতি মনোনয়ন প্রসঙ্গে ৩ জন প্রার্থীর নাম প্রস্তাব করে জেলা প্রশাসক বরাবর একটি লিখিত আবেদন দাখিল করেন। এ আবেদন দাখিল করার পরই শুরু হয় নানান আলোচনা-সমালোচনা। তিনজন প্রার্থীর মধ্যে প্রথম প্রার্থীর স্নাতক ডিগ্রির সনদ ভূয়া দাবি করে ত্রিশাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর গত ৭ জুলাই একটি অভিযোগ করেন ত্রিশাল পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি এ. বি এম. মাহবুব মুর্শেদ। তিনি প্রয়াত আবদুল হাই এর ছেলে।
অভিযোগে বলা হয়, ঐতিহ্যবাহী ত্রিশাল নজরুল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে সরকারি বিধি মোতাবেক এডহক (ম্যানেজিং) কমিটি গঠনের নির্মিত্তে ৩ জনের নাম উল্লেখ করে প্রধান শিক্ষক জেলা প্রশাসক বরাবর দাখিল করেছেন। আবেদনের প্রথম ব্যক্তি প্রয়াত আফছর উদ্দিন মন্ডলের ছেলে মোঃ জয়নাল আবেদীন শিক্ষাগত যোগ্যতা বিএ অনার্স উল্লেখ করেছেন, এবং একটি সনদ প্রদান করেছেন প্রধান শিক্ষকের সত্যায়িত। একজন প্রধান শিক্ষক হয়ে জাল সনদে কিভাবে সত্যায়িত করেছেন তাও তদন্ত প্রয়োজন।
অভিযোগে মাহবুবুর মুর্শেদ আরোও বলেন, আমারতো মনে হয় তিনি এইচএসসি পাশও করেননি। বিগত সময় নির্বাচনের হলফনামায় এইচএসসি পাশ উল্লেখ করেছেন। বর্তমানে প্রধান শিক্ষক কর্তৃক দাখিলকৃত কাগজপত্রে বিএ অনার্স উল্লেখ করেছেন যা জনমনে সন্দেহের উদ্রেক ও কৌতুহল সৃষ্টি করেছে। যা তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।
অভিযুক্ত বিএনপি নেতা মোঃ জয়নাল আবেদীন এর বিএ অনার্স সার্টিফিকটিতে দেখা যায় দি ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লা থেকে গত ২৩ জানুয়ারি ২০০০ সালে ৩.৫০ পয়েন্ট পেয়ে তিনি উত্তীর্ণ হয়েছেন। তার আইডি নম্বর 96S151012। সেখানে রেজিস্ট্রেশন নম্বর দেয়া হয়েছে 9615012। দাখিলকৃত সার্টিফিকেটে ত্রিশাল নজরুল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ রফিকুল ইসলামের সত্যায়িত রয়েছে। তবে এ সনদটি ভূয়া বলে উল্লেখ করেছেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) এর পরিচালক (প্রশাসন) ড. মহিবুল।তিনি বলেন, এটা একদম ফেইক (ভূয়া)। দি ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লার নামে আমাদের কোন বিশ্ববিদ্যালয় নেই। এখানে সার্টিফিকেট কেনাবেচা হয়। আমরা ইতিমধ্যে কয়েকবার এ বিষয়ে মতামত দিয়েছি।
এদিকে, এর আগেও একাধিকবার জাল সার্টিফিকেট বিক্রির অভিযোগে একাধিক দৈনিক পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন দি ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লা এর বিরুদ্ধে তদন্ত করে গত ২০২০ সালের ২২ মার্চবেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের পরিচালক ড. মোঃ ফখরুল ইসলাম সাক্ষরিত এক পত্রে জানান, দি ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লার কোন অস্তিত্ব নেই। কমিশন থেকে দি ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লা এর শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার অনুমোদন দেয়া হয়নি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে নজরুল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ রফিকুল ইসলামের সুস্পষ্ট বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এ ঘটনায় অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিষয়টি অবগত হয়ে ত্রিশাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল্লাহ আল বাকিউল বারী গত ২১ জুলাই এক তদন্ত প্রতিবেদন জেলা প্রশাসক বরাবর দাখিল করেন। সেখানে ত্রিশাল নজরুল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের এডহক ( ম্যানেজিং) কমিটির সভাপতি মনোনয়ন প্রসঙ্গে প্রার্থীদের সনদপত্র যাচাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা বলা হয়।
এদিকে এ ঘটনার অভিযোগ এর সত্যতা বিষয়ে জানতে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও বিএনপি নেতা মোঃ জয়নাল আবেদীন এর কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
জেলা প্রশাসক মোঃ মুফিদুল আলম বলেন, বিষয়টি অবগত হয়েছি। যাচাই বাছাই চলছে। যাচাই-বাছাই শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।