নিজস্ব প্রতিনিধি:
নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আগামী সোমবার (১১ আগস্ট) তিন দিনের সরকারি সফরে মালয়েশিয়া যাচ্ছেন। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী দাতুক সেরি আনোয়ার ইব্রাহিমের আমন্ত্রণে এ সফরে দুই দেশের মধ্যে পাঁচটি সমঝোতা স্মারক ও তিনটি নোট বিনিময় হবে বলে নিশ্চিত করা হয়েছে।
এই সফরকে কেন্দ্র করে মালয়েশিয়ায় বসবাসরত প্রায় ১২ লাখ বাংলাদেশি প্রবাসী নতুন আশায় বুক বেঁধেছেন। দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকা বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার পুনরায় খুলে দেওয়া হবে কিনা তা এই সফরের একটি বড় আলোচ্য বিষয়। মালয়েশিয়া প্রবাসী ব্যবসায়ী মো. আনিছুর রহমান বলেন, “এই সফরে শ্রমবাজার খুলে গেলে দেশ থেকে বিপুলসংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান হবে এবং প্রবাসীদের বিদ্যমান সমস্যার সমাধান হবে।”
মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. শামীম আহসান এই সফরকে দুই দেশের সম্পর্কের নতুন অধ্যায় হিসেবে বর্ণনা করেছেন। সূত্রমতে, ড. ইউনূসের সাথে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে শ্রমিক পাঠানোর ক্ষেত্রে জটিলতা দূরীকরণ, অবৈধ প্রবাসীদের বৈধতা প্রদান, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, জ্বালানি খাত, হালাল খাদ্য উৎপাদন ও রোহিঙ্গা সংকটসহ বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচনা হবে।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, “সর্বোচ্চ পর্যায়ের এই সফরে আমরা অনেক বাধা দূর করতে পারব বলে আশাবাদী। দুই নেতার মধ্যে ভালো বোঝাপড়া আছে যা আমরা কাজে লাগাব।”
সফরসূচি অনুযায়ী, ড. ইউনূস মালয়েশিয়ায় পৌঁছানোর পর তাকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হবে। এরপর তিনি মালয়েশিয়ান বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের আয়োজনে একটি ব্যবসায়িক সেমিনারে অংশ নেবেন, বাংলাদেশি কমিউনিটির সাথে মতবিনিময় করবেন এবং ইউনিভার্সিটি কেবাংসান মালয়েশিয়া (ইউকেএম) থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি গ্রহণ করবেন।
প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী হিসেবে রয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন, জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ও পররাষ্ট্রসচিব আসাদ আলম সিয়ামসহ অন্যান্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। ১৩ আগস্ট ঢাকায় ফেরার কথা রয়েছে ড. ইউনূসের।
কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই সফর বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া সম্পর্ককে নতুন মাত্রা দিতে পারে, বিশেষ করে শ্রমবাজার পুনরুদ্ধার ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে। প্রবাসী বাংলাদেশিরা আশা করছেন, ড. ইউনূসের এই ঐতিহাসিক সফর তাদের দীর্ঘদিনের সমস্যার স্থায়ী সমাধান বয়ে আনবে।