✍ জাহেদুল ইসলাম আল রাইয়ান:
বাংলাদেশের তরুণ শিক্ষাবিদ মুহাম্মাদ শিহাব উদ্দীন আজহারী অর্জন করেছেন এক অনন্য সাফল্য। কায়রোর বিশ্বখ্যাত বিদ্যাপীঠ আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের উসুলুদ্দীন অনুষদের হাদিস বিভাগ থেকে পিএইচডি তামহীদির ফাইনাল পরীক্ষায় তিনি প্রথম স্থান অর্জন করেছেন। ৯ সেপ্টেম্বর ঘোষিত ফলাফলে তাঁর গড় নম্বর দাঁড়ায় ৮৫.২২ শতাংশ (A+), যা নিঃসন্দেহে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের জন্য এক বিরল গৌরব।
শিহাব উদ্দীনের শিক্ষাযাত্রা শুরু হয়েছিল বাংলাদেশেই। ২০১২ সালে দাখিল ও ২০১৪ সালে আলিম পরীক্ষায় সাফল্যের সাথে উত্তীর্ণ হওয়ার পর তিনি ভর্তি হন দেশের প্রখ্যাত প্রতিষ্ঠান দারুননাজাত সিদ্দীকিয়া কামিল মাদ্রাসায়। এখানেই তিনি জ্ঞানের প্রতি ভালোবাসা, সাধনা ও আত্মনিবেদনকে জীবনের মূল শক্তি হিসেবে গড়ে তোলেন। দারুননাজাতের সমৃদ্ধ পরিবেশ ও আলেম-উলামাদের সান্নিধ্য তাঁকে ইসলামী জ্ঞানের গভীরে প্রবেশের প্রেরণা জুগিয়েছিল, যা পরবর্তী সময়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তাঁর সাফল্যের মজবুত ভিত হয়ে দাঁড়ায়।
এরপর তিনি কুষ্টিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফাযিল এবং বাংলাদেশ আরবি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কামিল সম্পন্ন করে জ্ঞানের ভাণ্ডারে নিজেকে সমৃদ্ধ করেন। প্রতিটি ধাপেই রেখেছেন মেধা ও নিষ্ঠার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
২০১৬ সালে বাংলাদেশ সরকারের মনোনীত স্কলারশিপ নিয়ে আল-আজহারে উচ্চশিক্ষার জন্য যাত্রা শুরু করেন তিনি। প্রাথমিক ভাষা শিক্ষা শেষে ২০১৭ সালে ভর্তি হন উসুলুদ্দীন অনুষদে। দীর্ঘ সাধনা ও পরিশ্রমের ফল হিসেবে ২০২০ সালে সম্পন্ন করেন গ্রাজুয়েশন। এরপর ২০২১/২২ শিক্ষাবর্ষে মাস্টার্সে ভর্তি হয়ে অর্জন করেন ৮৩ শতাংশ নম্বর, যা এ প্লাসের সমতুল্য। ২০২৩ সালে এমফিল থিসিসে পান সর্বোচ্চ গ্রেড মুমতাজ (এক্সেলেন্ট)। আর ২০২৫ সালে পিএইচডি তামহীদিতে প্রথম স্থান অর্জন করে তিনি প্রমাণ করেন—অধ্যবসায় ও আত্মপ্রত্যয় থাকলে অসম্ভব বলে কিছু নেই।
শুধু পড়াশোনায় নয়, প্রবাসী শিক্ষার্থীদের নেতৃত্ব ও কল্যাণেও রেখেছেন দৃষ্টান্তমূলক ভূমিকা। বাংলাদেশ স্টুডেন্ট অর্গানাইজেশনের উপদেষ্টা হিসেবে টানা তিন বছর দায়িত্ব পালন করে তিনি প্রবাসী শিক্ষার্থীদের ঐক্য ও সহযোগিতার প্রতীক হয়ে ওঠেন। পাশাপাশি ২০২০ সালে প্রতিষ্ঠা করেন মারকায সওতুল ইসলাম। এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ইতোমধ্যেই প্রায় ৭৫ জন শিক্ষার্থী আল-আজহার, মদিনা, কিং আব্দুল আজিজ, তাবুক, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সাউদ, আল-কাসিমিয়া, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক ও ইরাকের খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্ণ স্কলারশিপ লাভ করেছে। শিক্ষার্থীদের সহায়তায় তিনি গড়ে তুলেছেন আল-মদিনা অ্যাপ্লিকেশনস, যা এখন বিদেশে পড়তে আগ্রহী তরুণদের জন্য এক বড় ভরসা।
মুহাম্মাদ শিহাব উদ্দীনের এই সাফল্য নিছক ব্যক্তিগত নয়; বরং বাংলাদেশের জন্য এক বিরল অর্জন। আর তাঁর এই সাফল্যের পেছনে দারুননাজাত সিদ্দীকিয়া কামিল মাদ্রাসার অবদানও অনস্বীকার্য—যেখানে তিনি ইসলামী শিক্ষার ভিত গড়ে তুলেছিলেন। তাঁর জীবনকথা প্রমাণ করে—মেধা, পরিশ্রম আর সততার সমন্বয়ে একজন তরুণ শুধু বিশ্বমানের শিক্ষাঙ্গনে দীপ্ত হতে পারে না, বরং প্রজন্মের জন্য হয়ে উঠতে পারে অনন্ত প্রেরণা। তাঁর এই অর্জন নতুন প্রজন্মকে যেমন স্বপ্ন দেখাবে, তেমনি বাংলাদেশের নামকেও উজ্জ্বল করবে বিশ্ব দরবারে।