মোঃ বাদশা প্রামানিক, নীলফামারী প্রতিনিধিঃ
নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার ঝুনাগাছ চাপানী ইউনিয়নের পূর্ব ছাতুনামা আমিনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের অনিয়ম ও অনুপস্থিতি নিয়ে স্থানীয়দের ক্ষোভ বাড়ছে। নিয়মিত ক্লাস না হওয়া আর দায়িত্বহীনতার কারণে বিদ্যালয়ের পড়াশোনার পরিবেশ ভেঙে পড়েছে। শিক্ষার্থীর উপস্থিতিও কমছে দিন দিন।
বিদ্যালয়টিতে তিনজন শিক্ষক রয়েছেন—ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোফাসসেল হোসেন, সহকারী শিক্ষক রাবেয়া বসুরী এবং বাবুল হোসেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রধান শিক্ষকের দুর্বল নজরদারির সুযোগে সহকারী শিক্ষকরা নিয়মিত ক্লাস নেন না এবং নিজেদের সময়মতো স্কুলে আসা-যাওয়া করেন।
সোমবার (১ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সহকারী শিক্ষক বাবুল হোসেন বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত। ছুটির আবেদন বা মুভমেন্ট খাতায় তার কোনো উল্লেখ নেই। আর ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জানান, তিনি ওই দিন বাড়িতে ধান ভাঙার কাজে ব্যস্ত ছিলেন।
বার্ষিক পরীক্ষার প্রথম দিনেও পরিস্থিতি ছিল একই রকম। প্রথম শিফটে ১ম শ্রেণীর ৮ জন ও ২য় শ্রেণীর মাত্র ৩ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল। দ্বিতীয় শিফটে ৪র্থ শ্রেণীতে ৫ জন পরীক্ষার্থী পাওয়া যায়। কিন্তু ৩য় ও ৫ম শ্রেণীতে কোনো পরীক্ষার্থী উপস্থিত ছিল না। অভিভাবকদের দাবি, নিয়মিত ক্লাস না হওয়া ও শিক্ষকদের অনিয়মের কারণে বাচ্চারা স্কুলে যেতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে।
স্থানীয় অভিভাবক রবিউল ইসলাম বলেন, “বিদ্যালয়টি আমাদের এলাকায় স্থানান্তর করা হয়েছিল উন্নতি হবে ভেবে। কিন্তু কোনো পরিবর্তন হয়নি।”
অন্য অভিভাবক নুর ইসলাম বলেন, “আমরা চেষ্টা করি বাচ্চারা নিয়মিত স্কুলে যাক। কিন্তু শিক্ষকরা যদি নিজেরাই না থাকেন, বাচ্চারা শিখবে কীভাবে?”
প্রবীর কুমার নন্দ বলেন, “এখানে প্রায়ই আগেভাগে ছুটি দেওয়া হয়। শিক্ষকরা নিয়মিত আসেন না। ক্লাসও চলে এলোমেলোভাবে।”
এই অবস্থায় অনেক অভিভাবক সন্তানের ভবিষ্যৎ ভেবে অন্য বিদ্যালয়ে ভর্তি করাতে বাধ্য হচ্ছেন।
বিদ্যালয়টি আগে অনিয়মের কারণে অন্য এলাকা থেকে স্থানান্তর করা হয়েছিল। স্থানীয়দের ধারণা ছিল নতুন জায়গায় নতুনভাবে বিদ্যালয়টি চালু হলে উন্নতি হবে। কিন্তু পুরোনো সমস্যাই রয়ে গেছে।
এ বিষয়ে নীলফামারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, “বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তিনি আরও জানান, নিয়ম ভঙ্গের প্রমাণ মিললে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেওয়া হবে।