১৬ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২রা আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২০শে জিলহজ, ১৪৪৬ হিজরি

বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে সমঝোতার ইঙ্গিত, ২৩৪ বিলিয়ন ডলার ফেরত আনতে উদ্যোগ

নিজস্ব প্রতিনিধি:

বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে অভিযুক্ত ধনকুবেরদের সঙ্গে আর্থিক সমঝোতার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমস-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, অপেক্ষাকৃত কম গুরুতর আর্থিক অনিয়মের ক্ষেত্রে দেওয়ানি মামলা ও আর্থিক সমঝোতা ‘একটি সম্ভাব্য পথ’ হতে পারে।

তিনি আরও জানান, বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে আন্তর্জাতিক মামলার খরচ জোগাতে অন্তত ১০ কোটি ডলার সংগ্রহের পরিকল্পনা রয়েছে তার। এ প্রক্রিয়ায় তিনি আন্তর্জাতিক মামলার জন্য তহবিল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সহায়তা নিচ্ছেন। ইতোমধ্যে সিডনিভিত্তিক প্রতিষ্ঠান অমনি ব্রিজওয়ে ঢাকায় একাধিক বৈঠকে অংশ নিয়েছে।

পাচারের অঙ্ক: ২৩৪ বিলিয়ন ডলার

একটি অর্থনৈতিক শ্বেতপত্রে ধারণা দেওয়া হয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দীর্ঘ মেয়াদি শাসনামলে দেশ থেকে ২৩৪ বিলিয়ন ডলার (প্রায় ২৫ লাখ কোটি টাকা) পাচার হয়েছে। এসব অর্থ বিদেশি ব্যাংক ও সম্পদে বিনিয়োগ করা হয়েছে বলে অভিযোগ।

১১টি অগ্রাধিকারভিত্তিক তদন্ত এবং জব্দ অ্যাকাউন্ট

অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে ইতোমধ্যে শেখ হাসিনাসহ সাবেক সরকারের সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রভাবশালী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ১১টি গুরুত্বপূর্ণ তদন্ত শুরু হয়েছে। দেশীয় কয়েকটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টও জব্দ করা হয়েছে। পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সহায়তায় পাচার হওয়া সম্পদ উদ্ধারে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

যুক্তরাজ্যের প্রতি সহযোগিতার আহ্বান

লন্ডন সফরে থাকা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, যুক্তরাজ্য সরকারের ‘নৈতিক ও আইনি’ দায়িত্ব রয়েছে এই পাচারকৃত অর্থ শনাক্ত ও ফেরত পাঠানোর বিষয়ে। তিনি বলেন, “এগুলো জনগণের অর্থ এবং এগুলো চুরি করা হয়েছে।” এই প্রেক্ষিতে যুক্তরাজ্যের আরও ‘উৎসাহব্যঞ্জক সহায়তা’ প্রত্যাশা করেন তিনি।

আর্থিক সমঝোতা: রাজনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রে

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেন, “যদি কারও অনিয়ম গুরুতর না হয়, সেক্ষেত্রে দেওয়ানি মামলা ও সমঝোতা হতে পারে সমাধান।” যদিও কারা এ প্রক্রিয়ার আওতায় আসতে পারেন—তা তিনি জানাননি। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ বলছে, এই উদ্যোগ রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বহিঃপ্রকাশ।

বর্তমান সরকার গত মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম স্থগিত করে।

নির্বাচন আসছে এপ্রিলেই

প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস জানিয়েছেন, আগামী বছরের এপ্রিলের প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর আগেই দুঃশাসনের প্রতীক হয়ে ওঠা দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান অগ্রগতি নিশ্চিত করতে চায় তার সরকার।

লিটিগেশন ফান্ডিং: নতুন পথ খুঁজছে বাংলাদেশ

আন্তর্জাতিক মামলার খরচ জোগাতে লিটিগেশন ফান্ডিং-এর পথ বেছে নিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ খাতে ব্যয় যেমন—আইনজীবীর ফি, আদালত খরচ, তদন্ত ব্যয় প্রভৃতি, সেগুলো মেটাতে এই তৃতীয় পক্ষ অর্থ জোগায়। বিনিময়ে মামলা জেতার পর সাফল্যের অংশ হিসেবেই তারা সম্মানী পায়।

সিডনিভিত্তিক অমনি ব্রিজওয়ের প্রতিনিধি উইগার উইলিঙ্গা জানিয়েছেন, “বিদেশে পাচার হওয়া খেলাপি ঋণ পুনরুদ্ধারে অর্থায়ন ও ব্যবস্থাপনায় আমরা গভীরভাবে আগ্রহী।”

বাংলাদেশ ব্যাংক ও অন্তর্বর্তী সরকার মনে করছে, এই আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে বহু বছর ধরে চেপে থাকা অর্থ পাচারের বিপুল অঙ্ক পুনরুদ্ধার সম্ভব হবে—যা দেশের অর্থনীতিকে ঘুরে দাঁড়াতে সহায়তা করবে এবং জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনবে।

ফেসবুকে আমরা

মন্তব্য করুন

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সর্বাাধিক পঠিত নিউজ

Scroll to Top