২৫শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১১ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৯শে জিলহজ, ১৪৪৬ হিজরি

ঢাকা নগর ভবনে সংঘাতের কেন্দ্রবিন্দুতে আরিফ চৌধুরী—তাপসের ঘনিষ্ঠ থেকে ইশরাকের সমন্বয়ক

নিজস্ব প্রতিনিধি:

সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের ঘনিষ্ঠ এবং পদোন্নতির সুবিধাভোগী আরিফ চৌধুরী এখন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের শপথ দাবি আন্দোলনের সহ-সমন্বয়ক হিসেবে আলোচনায় উঠে এসেছেন। একসময় আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত হলেও বর্তমানে নগর ভবনে ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী’ আন্দোলনের অন্যতম মুখ এই কর্মকর্তা।

নগর ভবনে নিজের প্রভাব কাজে লাগিয়ে আরিফ চৌধুরী অভিযোগের মুখে পড়েছেন—তিনি আন্দোলনে অংশ না নেওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চিহ্নিত করে হয়রানি করছেন, এমনকি অর্থ আদায়ের অভিযোগও উঠেছে। গত ৪০ দিনে তার নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে নগর ভবনে হেনস্তার শিকার হতে হয়েছে বলে জানা গেছে।

সংঘর্ষ ও সহিংসতা: আতঙ্কে নগর ভবন

গত সোমবার ইশরাকপন্থী কর্মচারীদের দুটি পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় নগর ভবনে উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এতে গুরুতর আহত হন দুই কর্মচারী—মনির হোসেন (৪৫) ও মহিদুল ইসলাম (৩৫)। তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সংঘর্ষ চলাকালে ইশরাক হোসেন হাসপাতালে গিয়ে আহতদের খোঁজখবর নেন।

আরিফ চৌধুরীর অতীত ও পদোন্নতির ইতিহাস

পরিবহন বিভাগে সহকারী তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে বর্তমানে দায়িত্ব পালনকারী আরিফ চৌধুরী আগে বিদ্যুৎ বিভাগে অফিস সহকারী ছিলেন। আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্টতা এবং সুইডেন আওয়ামী লীগের এক নেতাকে আত্মীয় হিসেবে পরিচয় দিয়ে তিনি পদোন্নতি পান। এক সময় একটি ছাত্র নিহতের ঘটনায় বরখাস্ত হলেও পরবর্তীতে পুনর্বহাল হয়ে কর্মকর্তা পদে পদোন্নতি লাভ করেন। নিজেকে বিএনপি সমর্থিত শ্রমিক দলের সভাপতিও দাবি করেন তিনি, যদিও সেটির সুনির্দিষ্ট প্রমাণ নেই।

সেবা পুনরায় চালুর পরও বিশৃঙ্খলা

গত সোমবার ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষ নগর সেবা আংশিকভাবে চালু করলেও অধিকাংশ দপ্তর ছিল কার্যত ফাঁকা। ইশরাকপন্থী কর্মচারীদের একাংশ সেবা পুনরায় শুরু করতে চাইলে, আরিফ চৌধুরীর অনুসারীরা বাধা দেন বলে অভিযোগ ওঠে। একপর্যায়ে সাংবাদিকদের উপরও হামলার ঘটনা ঘটে। একজন টেলিভিশন রিপোর্টারের ফোন কেড়ে নিয়ে ছবি ও ভিডিও মুছে ফেলা হয়।

আরিফ বনাম প্রিন্স গ্রুপ দ্বন্দ্ব

নগর ভবনে বর্তমানে ‘আরিফ গ্রুপ’ ও ‘প্রিন্স গ্রুপ’ নামে পরিচিত দুটি পক্ষের দ্বন্দ্ব ক্রমেই প্রকাশ্য হয়ে উঠছে। আরিফ গ্রুপ অভিযোগ করছে, প্রিন্স গ্রুপ বহিরাগতদের এনে তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। অন্যদিকে প্রিন্স গ্রুপ দাবি করছে, যারা আন্দোলনে অংশ নেয়নি তাদের বিরুদ্ধে ভয়ভীতি, হয়রানি চালাচ্ছেন আরিফ ও তার অনুসারীরা।

ইশরাকের বক্তব্য

আহতদের দেখতে এসে ইশরাক হোসেন অভিযোগ করেন, শান্তিপূর্ণ নাগরিক সেবা কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত করতেই একটি পরিকল্পিত হামলা চালানো হয়েছে। তিনি বলেন, “ষড়যন্ত্রকারীদের মূল লক্ষ্য আন্দোলনকে দমন করে দৃষ্টি অন্যদিকে সরিয়ে নেওয়া। প্রশাসনকে দ্রুত এই হামলার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে।”

নগর ভবনে বর্তমানে একটি বিভক্ত পরিবেশ বিরাজ করছে—যেখানে রাজনৈতিক বলয়ের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও প্রভাব বিস্তারের লড়াই চরমে। আরিফ চৌধুরীর অতীত পরিচিতি, বর্তমান ভূমিকায় রূপান্তর এবং ইশরাকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা তাকে এই উত্তপ্ত পরিস্থিতির কেন্দ্রে এনে ফেলেছে। এদিকে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নাগরিক সেবা চালু রাখার পাশাপাশি নিজেদের নিরাপত্তা নিয়েও শঙ্কায় রয়েছেন।

ফেসবুকে আমরা

মন্তব্য করুন

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সর্বাাধিক পঠিত নিউজ

Scroll to Top