নিজস্ব প্রতিনিধি:
নির্বাচন কমিশন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছে। নতুন প্রণীত নির্বাচনী আচরণ বিধিমালায় ডিপফেইক, মিথ্যা প্রচারণা, পক্ষপাতমূলক কনটেন্ট এবং প্রার্থীদের চেহারা বিকৃত করে তৈরি ভিডিও-অডিও প্রকাশে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনের সভায় এ সংক্রান্ত খসড়া বিধিমালা অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও ব্যক্তিদের মতামতের ভিত্তিতে প্রণীত এই বিধিমালায় বেশ কিছু নতুন ধারা যুক্ত করা হয়েছে। গত ২৯ জুন প্রকাশিত প্রাথমিক খসড়ায় এআই ব্যবহার সম্পর্কে স্পষ্ট কোনো নির্দেশনা না থাকলেও এখন তা স্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বিধিমালা লঙ্ঘন করলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে সাইবার সুরক্ষা ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হবে।
বিধিমালায় আরও উল্লেখ করা হয়েছে, নির্বাচনি প্রচারণা ও ভোটগ্রহণের দিন ড্রোন বা কোয়াডকপ্টার ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে। নির্বাচনি প্রচারণার জন্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা যাবে না এবং ভোটের দিন শুধুমাত্র অনুমোদিত ব্যক্তিরাই মোটরসাইকেলসহ যান্ত্রিক যানবাহন ব্যবহার করতে পারবেন।
আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত কঠোর নিয়ম প্রণয়ন করা হয়েছে নতুন বিধিমালায়। রাজনৈতিক দল ২০ হাজার টাকা এবং প্রার্থীরা ১০ হাজার টাকার বেশি নগদ লেনদেন করতে পারবেন না। এর বেশি হলে ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিন বুধবার সাংবাদিকদের বলেন, “এআই ব্যবহার করে ভুল তথ্য ও বিভ্রান্তি ছড়ানো একটি বড় চ্যালেঞ্জ। উন্নত দেশগুলোও এ সমস্যা পুরোপুরি সমাধান করতে পারেনি। তবে আমরা গণমাধ্যমের সহযোগিতায় এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করব।”
নতুন বিধিমালায় নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দলের সদস্যদের অন্য দলে যোগদান রোধে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের কাছ থেকে লিখিত অঙ্গীকার নেওয়া হবে যে, তারা নিষিদ্ধ দলের সঙ্গে কোনোভাবে সম্পৃক্ত নন। বর্তমানে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ থাকায় এ নিয়ম বিশেষভাবে প্রযোজ্য হবে।
প্রচার সামগ্রী সংক্রান্ত বিদ্যমান নিয়ম বহাল রাখা হয়েছে। ব্যানার, লিফলেট ও ফেস্টুন শুধুমাত্র সাদা-কালো রঙের হতে হবে এবং নির্দিষ্ট সাইজের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। দলীয় সাধারণ সম্পাদকদের এবার থেকে হেলিকপ্টার ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়েছে, যা আগে শুধু দলীয় প্রধানের জন্য সীমাবদ্ধ ছিল।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নির্বাচনি প্রচারণা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তফসিল ঘোষণার পর কোনো প্রার্থী সংশ্লিষ্ট আসনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদে থাকতে পারবেন না। বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের মতামতের ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের সভায় এছাড়াও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনের খসড়া আলোচনার জন্য তোলা হবে। নতুন এই বিধিমালা নির্বাচনী পরিবেশ স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।