নিজস্ব প্রতিনিধি:
বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত পাল্টা শুল্ক আরও কমার ইঙ্গিত দিয়েছেন। রোববার (১০ আগস্ট) রাজধানীর গুলশান ক্লাবে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) আয়োজিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিতে শুল্কহার ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশে আনার সাফল্যে সরকারের প্রতিনিধিদলকে এই সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
ড. রহমান বলেন, “অনেক প্রতিযোগী দেশের জন্য এখনো শুল্কহার চূড়ান্ত হয়নি। বিশেষ করে পোশাক খাতে তাদের শুল্কহার নির্ধারিত হলে তা বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতামূলক পর্যায়ে থাকবে। এ বিষয়ে আমাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।” তিনি আরও একটি ইতিবাচক সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে বলেন, “একটি তৃতীয় বিষয় আছে যা আমি প্রকাশ্যে বলছি না, তবে এটি আমাদের জন্য সুসংবাদ বয়ে আনতে পারে। এর ফলে আমাদের ওপর আরেক দফা শুল্ক কমানো হতে পারে।”
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন, বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমানসহ বিভিন্ন বাণিজ্য সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। বিটিএমএ সভাপতি শওকত আজিজ রাসেলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন এবং বক্তব্য দেন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ নেতারা।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান বাণিজ্য আলোচনা প্রসঙ্গে ড. রহমান বলেন, “দেশের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে আমরা কোনো চুক্তি করিনি। আমরা তিনটি মূলনীতির ভিত্তিতে আলোচনা এগিয়ে নিয়েছি। প্রথমত, আমরা অন্তর্বর্তী সরকার হওয়ায় পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের জন্য কোনো বাধ্যবাধকতা রেখে যেতে চাই না। দ্বিতীয়ত, পরবর্তী সরকার যেন এসব চুক্তি পরিবর্তন, পরিমার্জন বা বাতিল করতে পারে সে ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তৃতীয়ত, আমরা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে এমন চুক্তি করছি যা বাতিলযোগ্য।”
তিনি জানান, ফেব্রুয়ারি থেকেই বাংলাদেশ এই প্রক্রিয়া শুরু করেছে যখন অন্যান্য দেশ প্রস্তুতি নেয়নি। “এটি কেবল শুল্ক হার সমন্বয়ের বিষয় নয়, বরং অশুল্ক বাধা, জাতীয় নীতি ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত জটিল প্রক্রিয়া,” যোগ করেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ প্রসঙ্গে ড. রহমান বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ‘ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক ইমারজেন্সি পাওয়ার্স অ্যাক্ট’ (আইইইপিএ) ব্যবহার করে এই শুল্ক আরোপ করেছিলেন। তবে এই আইনের ব্যবহার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বিতর্ক রয়েছে এবং নিউইয়র্ক ও ওয়াশিংটনের আদালত ইতিমধ্যে এই সিদ্ধান্ত বাতিল করেছে বলে তিনি জানান।
বাণিজ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বাংলাদেশের টেক্সটাইল শিল্পের জন্য এই শুল্ক হ্রাস একটি বড় অর্জন, যা দেশের রপ্তানি আয় বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সরকারের এই সাফল্য বেসরকারি খাতকে আরও আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে বলে মন্তব্য করেছেন শিল্প সংশ্লিষ্টরা।