নিজস্ব প্রতিনিধি:
জুলাই সনদে স্বাক্ষর না করার কারণ ব্যাখ্যা করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলটি জানিয়েছে, তারা জুলাই সনদে স্বাক্ষর করবে কেবল তখনই, যখন সনদ বাস্তবায়নের আদেশের পূর্ণাঙ্গ টেক্সট ও বাস্তবায়ন পদ্ধতির সুস্পষ্ট রূপরেখা দেখা যাবে। এনসিপির মতে, এই সনদ কেবল রাজনৈতিক সমঝোতার দলিল নয়, বরং বাংলাদেশের স্বৈরতান্ত্রিক কাঠামো ভেঙে গণতান্ত্রিক রূপান্তরের ভিত্তি তৈরি করার একটি ঐতিহাসিক অঙ্গীকার। তাই সনদের অবশ্যই দৃঢ় আইনি ও সাংবিধানিক ভিত্তি থাকা জরুরি।
গত এক বছরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে কাজ করে জুলাই সনদ ও এর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে সমঝোতায় পৌঁছেছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, জুলাই সনদ বাস্তবায়িত হবে তিন ধাপে—প্রথমে জুলাই সনদ আদেশ, তারপর গণভোট, এবং শেষে এমন এক সংসদ গঠন, যার থাকবে সংবিধান সংশোধনের গাঠনিক ক্ষমতা। কিন্তু এনসিপির অভিযোগ, সনদের অঙ্গীকারনামায় এই বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার কোনো উল্লেখ নেই, যা জনগণের সঙ্গে প্রতারণার শামিল। দলটির মতে, অতীতে রাজনৈতিক দলগুলো বহু প্রতিশ্রুতি দিলেও নিজেরাই তা ভঙ্গ করেছে, তাই এবার স্পষ্ট আইনি নিশ্চয়তা ছাড়া স্বাক্ষর করা ঠিক হবে না।
এনসিপি আরও তিনটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি উত্থাপন করেছে। প্রথমত, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের টেক্সট এবং গণভোটের প্রশ্নগুলো আগে থেকেই চূড়ান্ত করে জনগণের সামনে প্রকাশ করতে হবে। দ্বিতীয়ত, এই আদেশের খসড়া প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জারি করবেন, যা জনগণের সার্বভৌম অভিপ্রায়ের প্রতিফলন ঘটাবে। তৃতীয়ত, গণভোটে যদি জনগণ জুলাই সনদের পক্ষে রায় দেয়, তবে “নোট অব ডিসেন্ট” বা আপত্তির কোনো কার্যকারিতা থাকবে না। সেই রায়ের ভিত্তিতে আগামী নির্বাচিত সংসদ সংবিধান সংস্কার করবে, যার নাম হবে “বাংলাদেশ সংবিধান, ২০২৬।”
এনসিপির মতে, এই নিশ্চয়তাগুলো ছাড়া জুলাই সনদের সাংবিধানিক ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হবে না। তাই সনদের আদেশে এসব বিষয় স্পষ্টভাবে অন্তর্ভুক্ত না হওয়া পর্যন্ত তারা স্বাক্ষর থেকে বিরত থাকবে।
দলটি আরও উল্লেখ করেছে, অন্য কিছু রাজনৈতিক দল ১৯৭২ সালের সংবিধানের মূলনীতি টিকিয়ে রাখার যুক্তিতে জুলাই সনদে সই করেনি, তবে এনসিপির অবস্থান সম্পূর্ণ ভিন্ন—তারা মূলত আইনি ভিত্তি ও জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতার নিশ্চয়তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত স্বাক্ষর না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।