আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় সরাসরি বোমা হামলা চালানোর পর মধ্যপ্রাচ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর এই প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্র তেহরানে এমন সরাসরি সামরিক হামলা চালাল। পাল্টা প্রতিশোধের হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইরান, যা আঞ্চলিক যুদ্ধের আশঙ্কা বাড়িয়ে তুলেছে।
হরমুজ প্রণালি কি পরবর্তী সংঘর্ষের কেন্দ্রবিন্দু?
রবিবার ইস্তানবুলে ইসলামী সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি)-এর এক জরুরি বৈঠকে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ‘রেড লাইন’ অতিক্রম করেছে। তিনি ইঙ্গিত দেন, ইরান হরমুজ প্রণালি বন্ধ করে দিতে পারে—যা বিশ্ববাজারে তেলের প্রায় ২০% পরিবহনের প্রধান রুট।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যদি ইরান এই জলপথ বন্ধ করে দেয়, তা হলে বিশ্বব্যাপী জ্বালানির দাম বেড়ে যাবে এবং অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দেবে।
ইরান কি সত্যিই প্রণালি বন্ধ করতে পারবে?
হরমুজ প্রণালি ইরান ও ওমানের মাঝে অবস্থিত এবং পারস্য উপসাগরকে ওমান উপসাগরের সঙ্গে সংযুক্ত করে। সবচেয়ে সংকীর্ণ অংশে এটি মাত্র ৩৩ কিলোমিটার চওড়া। অতীতে বহুবার প্রণালি বন্ধের হুমকি দিলেও, ইরান কখনো তা বাস্তবায়ন করেনি।
ইরানের জাতীয় নিরাপত্তা কমিশনের সদস্য এসমাইল কোসারি জানিয়েছেন, তারা প্রণালি বন্ধের প্রাথমিক সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে, তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে সুপ্রিম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল।
বন্ধ হলে বাস্তবতা কী?
বিশ্লেষকদের মতে, ইরান নিম্নোক্ত পদক্ষেপ নিতে পারে:
-
সমুদ্রে মাইন স্থাপন
-
ট্যাংকার জব্দ বা হামলা
-
১৯৮০–র দশকের ‘ট্যাংকার যুদ্ধ’-এর পুনরাবৃত্তি
বৈশ্বিক অর্থনীতির ওপর সম্ভাব্য প্রভাব
আমেরিকান পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, এটি ইরানের জন্য ‘অর্থনৈতিক আত্মহত্যা’ হবে। তিনি চীনকে আহ্বান জানান যেন ইরানকে শান্ত রাখে, কারণ ইরানের ৯০% তেল রপ্তানি চীনেই যায়।
গোল্ডম্যান স্যাকস ভবিষ্যদ্বাণী করেছে, প্রণালি বন্ধ হলে তেলের দাম ১০০ ডলারের উপরে পৌঁছাতে পারে। এর প্রভাব:
-
খাদ্য, পোশাক, রাসায়নিকসহ প্রায় সব পণ্যের দাম বৃদ্ধি
-
আমদানি নির্ভর দেশগুলোতে মূল্যস্ফীতি তীব্রতর
-
সুদের হার হ্রাসে বিলম্ব
ইতিহাস কী বলে?
বৃহৎ সংঘর্ষের সময় তেলের দাম বাড়লেও পরে তা কমে আসে। যেমন:
-
২০০৩ সালের ইরাক যুদ্ধের আগে তেলের দাম ৪৬% বেড়েছিল, কিন্তু যুদ্ধ শুরুর পরই কমে যায়
-
২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সময় দাম ১৩০ ডলারে উঠলেও পরে ৯৫ ডলারে নেমে আসে
হরমুজ প্রণালি এখন আর শুধু একটি ভৌগোলিক চ্যানেল নয়, বরং বৈশ্বিক নিরাপত্তার এক স্পর্শকাতর কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। ইরান যদি এই পথ বন্ধ করে দেয়, তাহলে শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, গোটা বিশ্বের অর্থনীতি অচল হয়ে পড়তে পারে। যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলো এখন এই সংকট মোকাবিলায় অতিরিক্ত চাপের মুখে।