নিজস্ব প্রতিনিধি:
জুলাই মাসে ছাত্র-জনতার আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছত্রীসেনা মোতায়েনের পরিকল্পনা করেছিলেন। এমনকি হেলিকপ্টার ব্যবহার করে বোম্বিং করার কথাও তিনি বলেছিলেন।
বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ শেখ হাসিনা ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনুর কথোপকথনের একটি অডিও শোনানো হয়। ওই অডিওতে শেখ হাসিনাকে এ ধরনের পরিকল্পনার কথা বলতে শোনা যায়।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তিন আসামির বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেন তানভীর হাসান জোহা। তিনি এ মামলার বিশেষ তদন্ত কর্মকর্তা ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর।
সাক্ষ্য দেওয়ার শেষ পর্যায়ে তিনি ট্রাইব্যুনালে পাঁচটি অডিও জমা দেন। এর মধ্যে চারটি অডিও প্রকাশ্যে চালানো হয়। দুটি অডিওতে শেখ হাসিনা ও হাসানুল হক ইনুর কথোপকথন অন্তর্ভুক্ত ছিল। এদিন ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
অডিওতে কথোপকথনের কিছু অংশ:
হাসানুল হক ইনু: আমি মনে করি যে আপনার পদক্ষেপটা সঠিকই হয়েছে। এখন পর্যন্ত যা রিপোর্ট বাংলাদেশে পাচ্ছি আর কি। খালি ঢাকাতে আপনার রামপুরার দিকে এবং শনির আখড়াতে…।
শেখ হাসিনা: না, রামপুরা ক্লিয়ার। শনির আখড়ায় একটু ঝামেলা এখনো আছে।
ইনু: শনির আখড়ায় কিছু মোল্লারাই…।
শেখ হাসিনা: খালি মোল্লা না, সেখানে অনেক মাদ্রাসা। ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। মাইকিং করতে বলেছি। নারায়ণগঞ্জে ঢুকতে দিচ্ছে না আর্মিকে। আমরা ছত্রীসেনা নামাচ্ছি।
ইনু: ওহ, আচ্ছা।
শেখ হাসিনা: আমি বলছি, ক্যাজুয়ালটির দরকার নাই। ওরা ব্যারিকেড দিয়ে আছে তো, ঠিক আছে, আকাশ থেকে নামবে৷ কারণ, দুই পাশ দিয়ে ধরবে… ম্যাসেজটা দিয়ে দিতে পারেন।
ইনু: আচ্ছা।
শেখ হাসিনা: ছত্রীসেনা পাঠানো হচ্ছে। ঠিক আছে, হেলিকপ্টার দিয়ে সোজা বোম্বিং করা হবে। হেলিকপ্টার যাক, ওপর দিয়ে মারবে।
ইনু: আচ্ছা, ওপর দিয়ে সাউন্ড বোম যাবে আর কি।
হাসিনা: হুম।
জবানবন্দিতে তানভীর হাসান বলেন, গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর শেখ হাসিনার ফোনালাপের ৬৯টি অডিও ক্লিপ এবং ৩টি মুঠোফোন নম্বরের সিডিআর এনটিএমসি থেকে জব্দ করেন। জুলাই আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী লেথাল উইপন ব্যবহার করে সরাসরি গুলির নির্দেশে দিয়েছেন। আন্দোলনকারীদের অবস্থান নির্ণয় করে হেলিকপ্টার ব্যবহার করে বোম্বিং করার কথা বলেছিলেন এবং পরিকল্পিতভাবে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দিয়েছিলেন।