১৪ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৩শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

জবি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সমাপ্তি ঘোষণা

ইমতিয়াজ উদ্দিন, জবি প্রতিনিধি

সরকারের পক্ষ থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের চার দফা দাবি মেনে নেওয়ার কারণে চলমান আন্দোলনের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়েছে। পাশাপাশি কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচিও প্রত্যাহারের ঘোষনা করা হয়েছে।

আজ শুক্রবার(১৬ মে) সন্ধ্যা ৮টায় জবি ‘ঐক্য প্লাটফর্ম’ থেকে আন্দোলন সমাপ্তির ঘোষণা দেন জবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রইছ উদ্দীন।

অধ্যাপক ড. রইছ উদ্দীন বলেন, “আমাদের প্রত্যেকটি দাবি আদায় হয়েছে। বাজেট বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত হয়েছে। পরবর্তী সকল বাজেটে সেই ধারাবাহিকতা যাতে অক্ষুণ্ণ থাকে, সেই আশ্বাস পেয়েছি আমরা। অর্থ মন্ত্রণালয়, ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রনালয়ে সাথে মিটিংয়ে সরকার আমাদের ৪ দফা দাবি মেনে নিয়েছে। আমরা সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞ।”

তিনি আরো জানান, “সামনের বাজেটেই আমাদের দাবির প্রতিফলন দেখবো। আমাদের তিন দফা দাবির অস্থায়ী আবাসনের সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত হয়েছে। দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ অগ্রাধিকার প্রকল্পে প্রায়োরিটি ব্যসিস অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এবং বাজেট বৃদ্ধির ব্যাপরে সরকার ইতিবাচক সিদ্ধান্ত দিয়েছে। সামনের বাজেটেই আমাদের দাবির প্রতিফলন দেখবো।”

আন্দোলন সমাপ্তি ঘোষণা দিয়ে রইছ উদ্দীন আরো বলেন, “আজকে যেহেতু আমাদের দাবি পুরন হয়েছে তাই আমাদের চলমান আন্দোলনের সমাপ্তি ঘোষণা করছি এবং কমপ্লিট শাটডাউন তুলে নিয়েছি।”

প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার (১৫ মে) জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতাদের মতামতের ভিত্তিতে ‘জবি ঐক্যের’ পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রইছউদ্দীন এই আন্দোলনের কর্মসূচির ঘোষণা দেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কাকরাইল মোড়েই অবস্থান করবেন শিক্ষার্থীরা- এ ঘোষণাও দেন। এছাড়া গণঅনশনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে বলেন, “দাবি আদায়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা শুক্রবার জুমার নামাজের পর গণঅনশন শুরু করবে।” এতে সকল সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের অংশ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। এছাড়া আন্দোলনে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকদের ওপর পুলিশের হামলার প্রতিবাদে ১৪ মে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ‘কালো দিবস’ পালনের ঘোষণা দেন তিনি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) অনির্দিষ্টকালের জন্য শাটডাউন ঘোষণা করেন।

অধ্যাপক রইছউদ্দীন বলেন, ‘আমরা অধিকার জানাতে এসেছি। আমাদের ওপর নির্বিচারে হামলা চালিয়েছে পুলিশ। এটি অরাজকতা ও অন্যায়। দাবি আদায় না করে আমরা ঘরে ফিরব না।’ ১৪ মে কালো দিবস পালনের ঘোষণা দেন তিনি।

আগের দিন বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কাকরাইল মোড়ে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। অন্তত ৩০টি বাসে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যোগ দেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। আন্দোলনের কারণে সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তবে শিক্ষার্থীরা অ্যাম্বুলেন্সসহ জরুরি যান চলাচলের ব্যবস্থা করে দেন। আন্দোলনের মধ্যে দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক চৌধুরী রফিকুল আবরার। তবে আলোচনা ফলপ্রসূ হয়নি। পরে বিকেলে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার সঙ্গে বৈঠক করেন উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ।

এর আগে বুধবার(১৪ মে) বেলা পৌনে ১২টায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা অভিমুখে রওয়ানা হয়। পদযাত্রা প্রথমে গুলিস্তান মাজার গেটে বাধার মুখে পড়েন। পরে মৎস্য ভবনে ফের পুলিশের বাধা অতিক্রম করে যমুনা অভিমুখে এগিয়ে যেতে থাকেন জবি শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের পদযাত্রা কাকরাইল মসজিদ ক্রসিং মোড়ে যেতেই অতর্কিত টিয়ারগ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড, গরম পানি নিক্ষেপ করতে শুরু করে পুলিশ। এতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী সাংবাদিকসহ শতাধিক আহত হন।

শিক্ষার্থীদের চার দফা:
১. দাবিগুলো হলো- আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য আবাসন বৃত্তি ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে কার্যকর,

২.জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ বাজেট কাঁটছাট না করেই অনুমোদন,

৩. জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ পরবর্তী একনেক সভায় অনুমোদন করে অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়ন এবং শিক্ষকদের ওপর হামলাকারী পুলিশদের বিচারের আওতায় আনা।

ফেসবুকে আমরা

মন্তব্য করুন

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সর্বাাধিক পঠিত নিউজ

Scroll to Top