জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হেট স্পিচ বা বিদ্বেষমূলক বক্তব্য প্রচারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম । কেউ তা প্রচার করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দায়ের করা মামলার প্রধান আসামি শেখ হাসিনা ভারতে বসে সাক্ষীদের হুমকি–ধমকি দিচ্ছেন এবং ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। সাক্ষীদের ‘আমি আবারও ফিরবো, দেখে নেবো’ এসব বলে ভয় দেখানো হচ্ছে।
বুধবার (২২ জানুয়ারি) ট্রাইব্যুনালের সামনে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে এসব কথা বলেন তিনি। এর আগে গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করার ক্ষমতা বা এখতিয়ার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের নেই, এমন চ্যালেঞ্জ করে করা আবেদন খারিজ করে দেওয়া হয়েছে।ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন।
পরে ট্রাইব্যুনালের সামনে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, আমরা দেখছি শেখ হাসিনা দেশের বাইরে থেকে হেট স্পিচ দিয়ে যাচ্ছেন। হুমকি–ধমকি দিচ্ছেন। সাক্ষীদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। বিচারকাজ বাধাগ্রস্ত করার জন্য এসব করছেন তিনি।
ইউটিউবসহ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশিত ও প্রচারিত কথাবার্তার বিষয়ে কী পদক্ষেপ হবে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, এ বিষয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব, তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের সচিব এবং বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) তাৎক্ষণিকভাবে এ আদেশ বাস্তবায়ন করতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। তারা পদক্ষেপ নেবেন।
তাজুল ইসলাম বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হেট স্পিচ বা বিদ্বেষমূলক বক্তব্য প্রচারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তাই কেউ তা প্রচার করলে, প্রয়োজনে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, ‘তিনি (হাসিনা) বিদেশের মাটিতে বসে নানা ধরনের বক্তব্যের মাধ্যমে এ সরকার ও ট্রাইব্যুনালের বিচার প্রক্রিয়া এবং মামলার সাক্ষীদের ব্যাপারে উসকানিমূলক বক্তব্য রেখে চলেছেন, যা এ মামলার তদন্তকে প্রভাবিত করতে পারে। এ আচরণের মাধ্যমে তিনি এ বিচার প্রক্রিয়াকে বানচাল করার একটি অপচেষ্টা করছেন বলে আমরা দেখতে পাচ্ছি।’
আদালত এ বিষয়ে অবগত আছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আইনের নিষেধাজ্ঞা তো আছেই। তবুও কেউ তা প্রচার করলে যদি তা অপরাধের পর্যায়ে পড়ে তাহলে ঘটনাগুলো আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেবো।
হাসিনার যেসব বিদ্বেষমূলক বার্তা বিচার প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে, সেগুলোকে প্রচারের ব্যাপারে গণমাধ্যমকে সতর্ক করে তিনি জানান, আমাদের সবার লক্ষ্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা। এসব হুমকি দেওয়ার কারণে সাক্ষী ভয় পেতে পারেন বা সাক্ষ্য দেওয়ার আগ্রহ হারাতে পারেন, যা সুষ্ঠু বিচার প্রক্রিয়ার জন্য মোটেও কাম্য নয়।’
জুলাই-আগস্ট গণহত্যার শিকার ও আহত ব্যক্তিদের মর্যাদা অক্ষুণ্ন রাখতে ও ন্যায়বিচার পাওয়ার প্রক্রিয়াকে সুরক্ষিত রাখার জন্য এ সময় তিনি গণমাধ্যম ও দেশের জনগণের সহযোগিতা কামনা করেন।
গত ৫ ডিসেম্বর ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনের মুখে ক্ষমতা ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘৃণা, বিদ্বেষ ও উসকানিমূলক (হেট স্পিচ) সব ধরনের (লিখিত, অডিও-ভিডিও) বক্তব্য-বিবৃতি প্রচার-প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, গণমাধ্যমসহ সব ধরনের মাধ্যম থেকে তার প্রচার-প্রকাশিত বক্তব্য-বিবৃতি অপসারণেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।